গতকাল এক বোন খুব মন খারাপ করে বলছিলেন, উনি ইদানীং একদমই সালাতে মনোযোগী হতে পারছেন না, এমনকি নিয়মিত সালাত ও আদায় করতে পারছেন না। তিনি বলছিলেন "আপু খাচ্ছি,দাচ্ছি, আল্লাহর সব নিয়ামত ভোগ করছি আর আল্লাহকে ঠিকমতো একটু সিজদাহ্ ও করতে পারছি না!"
অথচ আমি ব্যক্তিগতভাবে বোনটিকে বেশ ভালোভাবেই জানি যে তিনি ফরয সালাতের পাশাপাশি নফল সালাত ও নিয়মিত আদায় করতেন। তাই যথেষ্ট অবাক হলাম। আরও কথা বলতে বলতে জানতে পারলাম সাম্প্রতিক কিছু গুনাহ বোনটির দ্বারা সংঘটিত হয়ে গিয়েছে। এবং আলহামদুলিল্লাহ সেটার জন্য তিনি যথেষ্ট অনুতপ্ত। তো যাই হোক, আমার কাছে কিছু পরামর্শ বা সাপোর্ট চাচ্ছিলেন আর কি।
প্রথমেই বলে রাখি, আমি কোনো রকম পরামর্শ দেওয়ার কোনো যোগ্যতাই রাখি না। তারপরও ক্ষুদ্র জ্ঞান এবং সীমিত পড়াশোনা থেকে মোটামুটি যা বলেছিলাম বোনটিকে তাই একটু শেয়ার করি এখানে। কারন এমনটা শুধু উনার না, আমাদেরও হয় বা হতে পারে। ওয়াল্লাহি, যা বলছি তা সবার আগে আমার নিজের জন্য। পরে অন্যদের জন্য। কারণ আমার নিজের ঈমানের হালতই আজ একরকম, কাল আরেকরকম। আমার মনে হয় আমার অন্যান্য অনেক দ্বীনি ভাই-বোনদের ও তাই!
যাই হোক ফিরে আসি মূল কথায়, আল্লাহ তায়ালা কারো উপর নারাজ হলে রিযিক কেড়ে নেন না, হায়াত কেড়ে নেন না, অক্সিজেন এর প্রবাহ বন্ধ করে দেন না। তিনি শুধু তার বান্দার সিজদাহ দেওয়ার অধিকার কেড়ে নেন।
আপনি কখন বুঝবেন আল্লাহ আপনার উপর নারাজ?!যখন দেখবেন আপনি নামাজ ছেড়ে দিয়েছেন। একজন বেনামাজির উপর আল্লাহ নারাজ থাকেন, আর তাইতো তার নামাজ পড়ার ইচ্ছা জাগেনা।
সে ভাবে সে নিজের ইচ্ছায় নামাজ ত্যাগ করে কিন্তু সে জানেনা আল্লাহ তায়ালা নিজেই তার সিজদাহ দেয়ার অধিকার কেড়ে নিয়েছেন।
আল্লাহ নারাজ আপনার উপর এর পরও নামাজ পড়বেন না, ভেবে দেখুন একবার কে আপনার উপর নারাজ! আপনার সৃষ্টিকর্তা, তার কাছেই আপনাকে ফিরে যেতে হবে। নামাজ না পড়ে যেই দুনিয়া আপনি তালাশ করবেন সেই দুনিয়া যিনি বানিয়েছেন তিনি নিজেই আপনার উপর নারাজ। সময়ের যিনি সৃষ্টিকর্তা তার জন্যই যদি আপনার সময় না হয় তাহলে আপনার চেয়ে বড় অকৃতজ্ঞ আর কে হতে পারে?
এ পর্যায়ে দেখলাম বোনটির চোখে-মুখে ভয়ের ছাপ ফুটে উঠলো। অস্ফুট স্বরে জিজ্ঞেস করলেন, "আল্লাহ কি আমাকে ক্ষমা করবেন?" এ প্রশ্নটিও শুধু ওই বোনের না আমাদের অনেকেরই। আর উত্তরটা হলো অবশ্যই করবেন, কারণ "আমরা এখনো জীবিত আছি।" আর "মৃত্যুর যন্ত্রণা শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা বান্দার তওবা কবুল করেন।" (তিরমিজি, ৩৮৮০)
শুধু কবুলই করেন তা না বরং আল্লাহ তায়ালা অত্যন্ত খুশি হন। কেমন খুশি জানেন তো?
“আল্লাহ তাঁর বান্দার তাওবাতে ঐ লোকের চেয়ে বেশিও বেশি খুশি হন যে মরুভূমিতে উট হারিয়ে ফেলেছিল এবং তা খুঁজে পেয়ে আনন্দের আতিশয্যে চিৎকার করে বলে ওঠে, “হে আল্লাহ! আমি তোমার রব আর তুমি আমার বান্দা!” (সহীহ বুখারী, ৬৩০৯)
তাই বলছি হয়তো আপনি কোন অসতর্ক মুহূর্তে পাপ করেছেন, হয়তো আপনি লজ্জিত, হয়তো আপনার ইচ্ছা করছে মাটির সাথে মিশে যেতে, হয়তো আপনি সেই উট হারানো লোকটির মত হতাশ! কোন ব্যাপার নয়। আল্লাহর দিকে ফিরে আসুন, আল্লাহর কাছে তাওবাহ করুন, আপনার অন্তরটা খুলে ধরুন, চোখের পানি ছেড়ে দিন। আপনি তাঁকে আপনার সামনেই পাবেন, আর আপনি দেখবেন যে আল্লাহ তা’আলা আপনার তাওবায় সেই ব্যক্তির চেয়েও বেশি সন্তুষ্ট, যে মরুভূমিতে তার উট খুঁজে পেয়েছিলো!