মুখোশের গল্প...
একটি বাংলা নাটকের আদলে লেখা.
জাহিদ আর সাম্মি দুজন মিলে তাদের বিবাহের ৫ বছরে পা রাখতে চলেছে। দুজনের সুখী পরিবার তাদের। দুজনই ভালো জায়গায় ভালো বেতনের চাকরি করে। সাম্মি মাঝেমাঝে দেশের বাহিরেও যায় অফিসের কাজে। কিছুদিন পর তাদের ৫ম বিবাহ বার্ষিকী হতে চলেছে। এটা নিয়ে খুবই এক্সাইটেড তারা। খাওয়ার টেবিলে শাম্মি জাহিদকে জিজ্ঞাসা করছে সে কি উপহার চায় এই বিবাহ বার্ষিকীতে... ঠিক এমন সময়েই জাহিদের ফোন বেজে উঠলো। জাহিদের সবচেয়ে কাছের বন্ধু প্লাবন ফোন দিয়েছে। ফোনের শুরুতেই জাহিদ বলছে...
জাহিদঃ প্লাবন, ভালো সময়ে কল করেছিস।
প্লাবনঃ কেন, কি হয়েছে?
জাহিদঃ তোর ভাবি জানতে চাচ্ছে বিবাহ বার্ষিকীতে আমি কি উপহার চাই। তো কি চাওয়া যায় বলতো।
প্লাবনঃ বল আরেকটা বিয়ে দিতে।
জাহিদঃ ধুর, একটাই সামলাতে পারি না। তোর সাথে আমার অফিসের কলিগ মিথিলার পরিচয় করিয়ে দেই আয় একদিন, আর কতকাল সিঙ্গেল থাকবি?
প্লাবনঃ আমি ভালো আছি এভাবেই, পেরা নিতে চাই না।
তারপর কল গেল কেটে। জাহিদ খাওয়া কন্টিনিউ করলো।
তো জাহিদ তাদের নতুন এপার্টমেন্ট এর জন্য কিছু ডিজাইন চেয়েছিল একটা কম্পানিতে, আর সেখান থেকে বেশ কিছু ডিজাইন পাঠানো হয়েছে যাতে জাহিদ পছন্দ করে দিতে পারে তারা কোনটা চায়। জাহিদ শাম্মিকে ডাকল তার সাথে বসে পছন্দ করার জন্য। জাহিদ এর গ্যালারিতে ডাউনলোড ফোল্ডার থেকে একের পর এক ডিজাইন দেখেই যাচ্ছে কিন্তু কোনটাই যেন কারো পছন্দ হচ্ছে না। হটাৎ করেই একটা মেয়ের অসামাজিক ছবি সামনে এসে পড়লো। জাহিদ সাথে সাথেই সেটা সরিয়ে নিয়ে বলল, হয়তো কোন স্ক্যাম হবে অটো দাউনলোড হয়ে গিয়েছে। কিন্তু শাম্মি খুবই চতুর একটা মেয়ে ছিল, সে দেখেই বুঝে ফেলেছে যে ওটা জাহিদের নিজের তোলা অথবা তাকে কেউ পারসোনালি পাঠিয়েছে। শাম্মি রাগারাগি করে জানতে চাইলো কিন্তু জাহিদ ভালো মানুষ সেজে অন্য কথাই বুঝানোর ট্রাই করলো। তারপর শাম্মি ঘরের দরজা বন্ধ করে দিল জাহিদ কে বাহিরে রেখেই। জাহিদ তৎক্ষণাৎ প্লাবনকে ফোন দিয়ে বলল প্লাবন যাতে যত তারাতারি পারে বাসায় আসে। জাহিদ মূলত এরকম সমস্যার জন্য প্লাবনের হেল্প নিয়ে থাকে।
আধ ঘণ্টা পর প্লাবন আসলো, তারপর জাহিদ প্লাবনকে সব বুঝিয়ে বলার পর,
প্লাবনঃ আমাকে শাম্মি ভাবিস না, সত্যি করে বল মেয়েটা কে।
জাহিদঃ আমার কলিগ মিথিলা।
প্লাবনঃ কি বলিস? তুই না অর সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিতে চাইলি? বাসায় আসছিলো নাকি?
জাহিদঃ হ্যা, দুইবার।
প্লাবনঃ শাম্মি কোথায় ছিল তখন?
জাহিদঃ একবার দেশের বাইরে গিয়েছিল আর অন্যবার ঢাকার বাহিরে।
প্লাবনঃ বাহ! সাবাস! ঠিকাছে আমি দেখছি কি করা যায়।
প্লাবন কিছুক্ষন দরজায় টাকাটাকি করার পর শাম্মি দরজা খুলল আর তারপর প্লাবন নিজের মতো করে বুঝানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু শাম্মি নিজের জায়গাতেই রইলো। শাম্মি ভাবতেই পারে নাই যে জাহিদ এমন একটা কাজ করতে পারে। এরপর প্লাবন জাহিদকে বলল যে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে একটু সময় দেওয়ার জন্য।
দিন যাচ্ছে, শাম্মির ছেতছেত ব্যবহারে জাহিদ ক্রমাগত কষ্ট পেয়েই যাচ্ছে আর নিজেকে সে এখন খুবই নিচু মনে করে। আগে জাহিদ আর শাম্মি একসাথে জাহিদ এর গাড়িতে করে অফিসে যেত কিন্তু এখন শাম্মি উবার ব্যবহার করছে, একসাথে খাওয়া দাওয়া করছে না, একসাথে ঘুমোচ্ছে না। জাহিদ শাম্মির কাছে ক্রমাগত মাফ চেয়েই যাচ্ছে কিন্তু শাম্মির মন গলছে না।
রবিবার শাম্মির অফিস বন্ধ কিন্তু জাহিদ এর টা খোলা। তো জাহিদ অফিসে গেল। জাহিদ সাধারণত অফিস থেকে বাসায় ফেরে রাত ৯টার পর। কিন্তু ঐদিন মাথা ব্যথার কারনে জাহিদ আগেই অফিস থেকে বেড়িয়ে পড়েছে। রাস্তা্র দোকান থেকে সে বেশ কিছু ফুল নিয়ে নিল শাম্মিকে দিয়ে রাগ ভাঙ্গাবে সেটা ভেবে। বাসার দরজায় গিয়ে দরজায় নক দেওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে ভিতর থেকে কথা শুনতে পেল জাহিদ।...
চেনা কন্ঠ... হ্যা, এ তো প্লাবন। জাহিদ ভাবল যে শাম্মি হয়তো ঝামেলার কথা বলার জন্য ডেকেছে প্লাবনকে, তো জাহিদ ভাবল সে বাহির থেকে শুনে এরপর ঢুকবে ঘরে।
প্লাবনঃ ঝামেলা এখনো মিটেনি তোমাদের মাঝে? তুমি কেন ছার দিচ্ছ না? তুমি নিজে কি খুবই মহৎ নাকি?
শাম্মিঃ দেখো প্লাবন, জাহিদ এমনটা করতে পারে আমি ভাবতেই পারি না, আর তাছারা অর অসহায় মুখটা এখন দেখলে আমার খুবই বিরক্ত লাগে। আমি চাই না আমার অসহায় মুখটাও দেখুক ও।
প্লাবনঃ তো কি করতে চাইছ তুমি?
শাম্মিঃ আমি চাচ্ছি আমাদের রিলেশনটার এখানেই সমাপ্তি ঘটুক।
প্লাবনঃ ভেদাভেদ চাচ্ছ জাহিদের সাথে?
শাম্মিঃ না, আমি চাচ্ছি তোমার আর আমার অবৈধ সম্পর্কটার সমাপ্তি ঘটাতে।
এভাবে কথা চলতে থাকলো।
জাহিদ বাইরে থেকে সব শুনে বুঝতে পারলো যে, তার অজান্তেই শাম্মি আর প্লাবন এর মাঝে ছয় মাসের বেশি সময় ধরে একটা অবৈধ সম্পর্ক চলছে। জাহিদ আতকে উঠলো। কিছুক্ষন ভাবার পর জাহিদ তার বন্ধু প্লাবন আর বউ শাম্মি দুইজনের ফোনে একটা ম্যাসেজ পাঠিয়ে সেখান থেকে চলে গেল।
ম্যাসেজে লেখা ছিল...
এই মুখোশের গল্পে আমি দোষী ছিলাম ভেবে এতদিন নিজেকে ছোট মনে করতাম। কিন্তু সবচেয়ে কাছের বন্ধু কে বউয়ের সাথে অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে যেনে এখন নিজেকে একটু কম অপরাধী মনে হচ্ছে।
দরজার বাহিরে ফুলগুলো ফেলে সেদিন জাহিদ চলে গেল। এরপর আর কোনদিন দেখা হয়নি জাহিদ আর শাম্মির। গল্পের লেখকও হয়তো ভেবে পায়নি এই গল্পের সমাধান কিভাবে পাওয়া যায়, তাই হয়তো সমাধান দিতে পারে নি।