পোষা কুকুর-বিড়ালের চরিত্র নিয়ে একটা রসিকতা খুব জনপ্রিয়। একটা পোষা কুকুর মনে করে যে, যেহেতু তার মনিব তাকে খাওয়ায়, যত্ন নেয়, আদর করে; তাহলে মনিবই তার প্রভু। আর বিড়ালের ভাবনাটা ভিন্ন। পুরো শরীর নয়, শুধুমাত্র বিড়ালের থাবার নিচের অংশই শুধু ঘামে। বিড়াল খুব ভয় পেয়ে গেলে তাই, মাটিতে ঘামের ভেজা ছাপ রেখে যেতে পারে।সে ভাবে যেহেতু 'হুম্যান' তাকে খাওয়ায়, পরায়, যত্ন নেয়, আদর-আপ্যায়ন করে, সেহেতু সে নিজেই প্রভু।
বিড়াল বাস্তবেও এমন। তার মেজাজ-মর্জিটাই একেবারে আলাদা। মন চাইল তো আদর পাওয়ার জন্য লেজ নাড়াবে, আবার বেশিক্ষণ আদর করলে তার ভালো লাগবে না খামচে দিবে। বিড়ালের সবচেয়ে বড়ো ক্ষমতা বোধহয় বহুদূরে ছেড়ে দিয়ে আসলেও এরা মালিকের বাসায় চলে আসতে পারে। এর কারণ এখনও অজানা। তবে কিছু কিছু বিজ্ঞানীর মতে বিড়াল সূর্যের আলোতে দিক বুঝতে পারে। আরেকদল বিজ্ঞানীর ধারণা বিড়াল পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র ব্যবহার করে দিক ঠিক রাখতে পারে। রাত-বিরেতে ঘোর মাথায় তুলে ফেলবে খেতে চেয়ে। আবার ঘুম ভেঙে বিড়ালকে কিছু খেতে দিলেন, দেখবেন খাবারে মুখ দিয়েই চলে যাবে। হাজারো ডেকেও সাড়া পাওয়া যাবে না, অথচ যখন তার মন চাইবে তখন কোলে এসে বসে থাকবে। এত সব জটিলতার পরেও স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মাঝে পোষা প্রাণী হিসেবে বিড়ালের কদরই সবচাইতে বেশি। এক আমেরিকাতেই পোষা বিড়ালের সংখ্যা প্রায় ৮কোটি। বন্য বিড়াল, এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ানো বিড়াল, আর পোষা বিড়াল মিলিয়ে পৃথিবীতে বিড়ালের মোট সংখ্যাটা ৬০কোটিও হতে পারে। আজ eআরকিক পাঠকদের জন্য থাকছে বিড়াল নিয়ে খুঁজে বের করা এমন অনেক ফ্যাক্টস, যা হয়ত আপনি জানতেন না।
মেছো বিড়াল বা Fishing Cat এর বৈজ্ঞানিক নাম Felis viverrina | একে মেছো বাঘ, ছোট বাঘ, বাঘুইলা বা মেচি বাঘ বলে । এর চেহারা এবং গায়ের ডোরা অনেকটা বাঘের মত। মেছো বিড়াল লেজসহ লম্বায় সাড়ে তিনফুট । ওজনে ০৫ থেকে ১৬ কেজি ভারী | সামান্য বা আলগোছ হলুদে মেশানো ধূসর রঙের চামড়ায় মোটামুটি লম্বালম্বিভাবে কয়েক সারি বা গাড় হলুদ ডোরা রয়েছে। এদের কান ছোট এবং গোলাকার। এদের চোখের পিছন থেকে গলার শেষ পর্যন্ত ৬ থেকে ৮ টি কাল বর্ণের ডোরাকাটা দাগ থাকে। মেছো বিড়াল বাংলাদেশের যে কোন জায়গায় পাওয়া যেতে পারে । তবে ঝোপঝাড় বা জঙ্গলযুক্ত এলাকায় ওদের দেখা মেলে বেশি। সকল বনাঞ্চলেই ওরা কমবেশি আছে। মেছো বাঘ মূলত মাছ এবং কাঁকড়াভুক হলেও এদের খাদ্য তালিকায় শামুক, মোরগ-মুরগি, হাঁস, ছাগল, ভেড়া এবং বাছুর অন্তর্ভুক্ত। খাদ্যাভাব দেখা দিলে ওরা মানুষের ঘরে ঢুকে শিশু বা বাচ্চা তুলে নিএ যায়। এ কাজটি ওরা করে সাধারণত সন্ধ্যা বা রাতের বেলা। মাছ ধরার জন্য মেছো বিড়াল পানিতে নামে না। পানির উপর কোন গাছের ডালে বা পানির উপর জেগে থাকা কোন পাথরের উপরে বসে থাবা দিয়ে শিকার ধরে।
এরা ১৫ মাস বয়স হলে প্রজনন উপযোগী হয়। এরা সাধারনত মার্চ মাস থেকে জুন মাসে প্রজনন করে থাকে। একসাথে এরা ২-৩টি বাচ্চা প্রসব করে। সাধারণত প্রতিটি বাচ্চার ওজন হয় গড়ে ১৭০ গ্রাম। এরা ১০ বৎসর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। বনাঞ্চল বা আবাসস্থল ধ্বংস, মানুষের অসচেতনতা ইত্যাদি কারণে এদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে।
প্রায় সারাদিন ঘুমালেও বিড়ালের ঘুম খুবই ‘শব্দকাতর’। প্রাপ্তবয়স্ক একটি বিড়াল তার এক কান সজাগ রেখেই ঘুমায়। সামান্যতম শব্দও বিড়াল এড়িয়ে যেতে দেয় না।বিড়ালের দৃষ্টিশক্তি খুব তীক্ষ্ণ হলেও বিড়ালেরও আছে ব্লাইন্ড স্পট।পুরো শরীর নয়, শুধুমাত্র বিড়ালের থাবার নিচের অংশই শুধু ঘামে। বিড়াল খুব ভয় পেয়ে গেলে তাই, মাটিতে ঘামের ভেজা ছাপ রেখে যেতে পারে। নাক কিংবা থুঁতনির একদম নিচে কোন কিছু থাকলে বিড়াল সেটা দেখতে পারে না।তড়িৎ বিজ্ঞানে নিকোলা টেসলার অবদান অসামান্য। তবে পৃথিবী কৃতজ্ঞ থাকতে পারে তার বিড়ালের প্রতি। এক সন্ধ্যায় পোষা বিড়ালের পশমে তিনি বিদ্যুতের উপস্থিতি টের পান এবং এরপরেই উৎসাহী হন ইলেক্ট্রিসিটি নিয়ে গবেষণা করার।বিড়ালের আলস্য জগদ্বিখ্যাত। একটা বিড়াল তার জীবনের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সময় ঘুমিয়ে কাটায়। অর্থাৎ একটি ৯ বছর বয়সী বিড়াল ৬ বছর ঘুমিয়েই কাটিয়েছে।
খুব একটা পছন্দ না করলেও বিড়াল প্রয়োজনে লবণাক্ত পানি পান করতে পারে। বিড়ালের নাকের গঠন মানুষের আঙুলের ছাপের মতই অনন্য। অর্থাৎ দুটো বিড়ালের নাকের ছাপ কখনো এক রকম নয়!মিউটেশনের কারণে বিড়ালের জিভে মিষ্টি স্বাদ পাওয়ার কোন রিসেপ্টর নেই। তাই লবণাক্ত পানি পান করতে পারলেও বিড়াল মিষ্টি স্বাদ গ্রহণ করতে পারে না।