আমাদের পুরোনো অ্যালবাম থেকে নেওয়া ছবি। কোনো এক লক্ষ্মী পুজোর দিনে পুজোর কাজ করছিল আমাদের বাড়ীর লক্ষ্মী (আমার মা)-
প্রিয়,
পাঠকগণ,
কেমন আছেন আপনারা সবাই? আশাকরি ভালো আছেন।
জানেন একটা কথা আমার সবসময় মনে হয়,যে দিন গুলো কেটে যায় সেগুলো যেমন আর ফিরিয়ে আনা যায়না, তেমনি কেনো সেই সব দিনের স্মৃতি গুলোও আমরা ভুলে যাই না?
ভাবুন যদি সত্যিই এমনটা সম্ভব হত তাহলে আমাদের জীবনে কষ্ট কতো কম হতো।
জানেন, আজ আমি বাড়ি এসেছি, বাড়ি মানে আমার বাপের বাড়ি, তবে বিশ্বাস করুন মা ছাড়া বাড়িটা বাড়ি বলে মনেই হয়না। কোনো একটা গল্পে বা কবিতায় পড়েছিলাম,-"যে গৃহে মা নেই, স্নেহের শীতল স্পর্শ ও সেখানে নেই।"
কথাটা একদম সত্যি। নিজের জীবন দিয়ে সেটা বুঝেছি, বাড়িতে গিয়ে ঘরে যেনো মন ই দাড়ায় না। কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগে। তবুও বাস্তবকে তো মেনে নিতেই হয়। বাবার জন্য বড্ড কষ্ট হয়, ফাঁকা বাড়িতে একা একা একজন মানুষ থাকা যে কত কষ্টের,সেটা বোধহয় আমরা বাইরে থেকে বুঝতেও পারবনা। এই বয়সে ঠাকুমাকে ও রেঁধে খেতে হয়,এটা কপাল ছাড়া আর কি?
বাবার আর ঠাকুমার জন্য পিঠে করে নিয়ে এসেছি, মানুষ দুটোকে না দিয়ে খেতে মন চায়না, করে দেবার মতো আমরা ছাড়া আর কেই বা আছে, বাবাকে একটু ভালোমন্দ রেঁধে খাইয়ে যাই, ঠাকুমা তেমন ভাবে পারেনা, আর সবসময় বাবা আমাদের শ্বশুর বাড়ি যেতেও চায় না। বুঝতে পারি যতই হোক মেয়ের শ্বশুর বাড়ি সবসময় যাওয়াটা সম্মানের নয়। তাই আমি মাঝে মাঝে এসে দেখে যাই আর যা খেতে ভালোবাসে সেটা খাইয়ে যাই।
বাবার জন্য হয়তো আর ও অনেক কিছু করা উচিৎ কিন্তু সেটা বোধহয় করতে পারিনা, আর মায়ের মত যত্ন করার চেষ্টা করা ও বৃথা, কারণ সেই জায়গা কেউ পূরণ করতে পারবে না।আমি ভাবী ঠাকুমা না থাকলে বাবার কত কষ্ট হবে, অবশ্য তখন বাবা আমাদের কাছে থাকবে অন্তত তাকে নিজের কাছে রাখলে দুশ্চিন্তা কম হবে।
আমি সত্যিই চাই বাবা নিজের জীবন নিয়ে নতুন করে ভাবুক।আর কোনো কিছু নয়, শেষ বয়সে একজন সঙ্গী যার সাথে দুটো কথা বলা যায়।হয়তো অনেকেই ভাববেন মেয়ে হয়ে এমন কথা বলছি,
হ্যাঁ,মেয়ে হয়েই বলছি, কারণ বাবার কষ্টটা আমি দেখছি।জীবনটা একা কাটানো যায়না, পাশে একজনকে দরকার যে অন্তত এক গ্লাস জল এগিয়ে দিতে পারবে। শেষ বয়সে মানুষ বড্ড অসহায় হয়ে পড়ে, আমি চাইনা আমার বাবা এইভাবে গুমড়ে গুমড়ে বেচেঁ থাকুক। বাবার কষ্ট হয় তবে প্রকাশ করতে পারে না।
অনেকে বুঝিয়েছে বাবাকে বাবা কিছুতেই রাজী হয়না, তার পরিস্থিতিটা ও বুঝি, কিন্তু খুব কষ্ট হয় আমার, আমি সত্যিই জানিনা এমন কেনো হলো, মাকে এতো তাড়াতাড়ি কেনো চলে যেতে হলো, ওই একটা মানুষ না থাকায় আমাদের প্রত্যেকের জীবনের হিসাব একেবারে উল্টে পাল্টে গেলো।
জীবন কত অনিশ্চিত তাইনা?এত লড়াই, ঝগড়া, বিবাদ, হিংসা সব কিছুতে আমরা এতো ব্যস্ত থাকি যে এটা ভুলে যাই ভালোবাসার সময় বড্ড কম, আর এই ভালোবাসার মানুষগুলোকে আমরা বড্ড অবহেলা করি, মনে হয় এরা আর কোথায় যাবে, তবে এটা ভাবিনা যে একটা জায়গা আছে যেখানে গেলে ফিরিয়ে আনার সব রাস্তা বন্ধ।
মাকে ভীষণ মিস করি, জীবনের সমস্ত কঠিন সময়ে মনে হয় একটা মানুষের উপস্থিতি সবটা বদলে দিতে পারত। ভালো থেকো মা, শক্তি দিও যেন তোমার মত লড়াই করতে পারি, আর অপেক্ষা করো তোমার কাছে একদিন ফিরবো মা।
ভালো থাকবেন আর ভালো রাখবেন প্রিয়জনদের।
অনেক পুরনো ছবি, বহু বছর বাবার এমন হাসি মুখ দেখিনি-
সবার মুখের হাসি দেখলেই বুঝবেন কতো সুখের ছিলো দিনগুলো। ক্যামেরার পেছনে আমিও একই রকম ভাবে হাসছিলাম-
তোমায় বড়ো মিস করি মা