আগের বার দোলে বাড়ি গিয়ে তোলা ছবি, আজ মানুষটা নেই--
প্রিয়,
পাঠকগণ,
আশাকরি সবাই ভালো আছেন।
আজ আমার মনটা একদম ভালো নেই। জন্ম হলেই মৃত্যু আছে এই কথাটা জীবনের সব থেকে বড় সত্যি। আজ আর ও একজন মা কে হারালাম সারাজীবনের মতো।
জন্মদাত্রী একজন হলেও মায়ের মতো অনেকেই আমাদের ভালোবাসে। আর আমার জীবনে এই রকম অনেক মানুষ আছে, এটা ভেবে যেমন ভালো লাগে তেমনি ভয়ও হয়, এরা সবাই যখন এক এক করে চলে যাবে, আমি এইভাবেই কষ্ট পাবো।
আজ আমার থেকেও বেশী কষ্ট পাচ্ছে ঝুনুদি। মা কে হারিয়ে একদম অসহায় হয়ে গেলো মেয়েটা।গতকাল ওর মা মারা গেলো।একদম সুস্থ মানুষটা মাত্র ৪দিনের মধ্যে সবাইকে ছেড়ে চলে গেলো।"ব্রেন- স্ট্রোক" আজ থেকে বোধহয় এই রোগটার ভয় সারাজীবন পিছু ছাড়বে না। হ্যাঁ একটাই ভুল ছিলো তার ২ দিন হাই প্রেসার এর ওষুধটা খাওয়া হয়নি। মধ্যবিত্ত পরিবারে সকল মায়েদের একটাই সমস্যা, তারা নিজেদের কথা সবার পরে ভাবে।টানাটানির সংসারে যদি একদিনের ওষুধ বাঁচানো যায় এইটুকুই চেয়েছিল মাত্র, ভাবেনি তার ফল এই হতে পারে। যেদিন অসুস্থ হলো সেদিন কিন্তু ওষুধ খেয়েছিল। তাতে কি আগের ২দিনের টা যে বাকি ছিলো।
৪ তারিখ সকাল ১১.৩০ নাগাদ সকালের খাওয়া শেষ করে রান্না ঘরে কাজ করছিল। হটাৎ শরীরটা খারাপ লাগলো, ঝুনুদির বাবাকে ডাকলো, বললো আমার ঘাড় মাথা ভীষণ ব্যাথা করছে, বলতে বলতেই মুখ থেকে গ্যাজা বেরোতে শুরু করে, সাথে সাথে ডক্টরের কাছে নিয়ে যায়, সেখান থেকে হাবড়া হসপিটাল, সেখানেও রাখেনি ট্র্যান্সফার করলো আর. জি. কর মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল। সেখান ৩দিন ভর্তি ছিলো, আর ৭ তারিখ রাত ১.২২মিনিটে তিনি পরলোক গমন করেন।
এই কয়েকটা দিন সে কোনো কথা বলার মত অবস্থায় ছিলো না, শেষবারের মতো ছেলেমেয়ে দুটোকে কিছু বলেও যেতে পারলো না, এই লিখেছিল নিয়তি ওনার কপালে? "অনেক চেষ্টা করেও মা কে ফিরিয়ে আনতে পারলাম না।" এই একটাই কথা বলে চলেছে কাল থেকে। সত্যি বলতে স্বান্তনা দেওয়ার মতো ভাষা নেই,
এই অবস্থায় কেমন লাগে সেটা বোধহয় তারা সবাই বুঝবে যারা মা কে হারিয়েছে।
রবিবার সুনীতাদি কে নিয়ে গেলাম ভাবলাম গিয়ে দেখতে পাবো একবার, দমদম গিয়ে জানলাম যে ওরা ট্র্যান্সফার করিয়ে নেবে, গেলেও দেখা হবেনা।ফিরে এলাম, আর রাতেই খবর এলো সব শেষ। সারারাত ছটফট করলাম ওই রাত যেনো আর কাটে না। সকাল বেলায় রওনা করলাম, আমাদের বাড়ির ওখানে পৌঁছে দেখি তখনও তাকে নিয়ে আসেনি। বাড়ি ভর্তি লোকজন সবার চোখে জল, মনে একরাশ কষ্ট, বড্ড ভালো ছিলো মানুষটা। দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলো সবাই, ওনাকে দেখে মনে হচ্ছে যেনো শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে, ডাকলেই যেনো সাড়া দেবে। ঝুনুদিকে সামলানোর চেষ্টা করলাম, সব নিয়ম মানা হলো, অনেক কষ্টে অল্প একটু ভাত ওকে খাওয়ালাম। শ্মশানে যেতে হবে, ঝুনুদিকে একা আমি ছাড়তে পারবো না, তাই ওকে নিয়েই গেলাম, শেষবারের মতো মাকে দেখুক এই জীবনে তো আর দেখা হবে না।
সব কাজ মিটিয়ে বিকালে ফিরলাম আমরা, ওকে স্নান করিয়ে আমরাও স্নান করলাম। বাড়ি ভর্তি লোকজন অথচ বাড়ি একদম ফাঁকা শুধু একটা মানুষের অভাব। রাতে একটু সাবু খেলো ওরা, বিছানা করে দিলাম তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লো, তবে ঘুম কতটা হয়েছে জানিনা।৪ তারিখ থেকে ঘুমায় না, চোখে ঘুম তবে বার বার বলছে "চোখ বন্ধ করতে পারছিনা, মা কে মনে পড়ছে,মায়ের একটাও ছবি নেই আমার সাথে।"ওর এই কথার কি উত্তর দেবো বুঝতে পারিনা। সত্যিই আমরা নিজেদের মধ্যে এতো ব্যস্ত থাকি যে মা বাবার সাথে একটা ফোটো ও তুলি না,অথচ প্রতিনিয়ত সোশ্যাল মিডিয়ার নিজেদের ফোটো আপডেট দিতে কিন্তু ভুলিনা।
একটা মানুষের না থাকা সবটা পাল্টে দিলো। ওই বাড়িতে একা থাকতে অনেক কষ্ট হবে ওর। আমরা গেলে থাকবো এক দু দিন কিন্তু ওকে তো ওই বাড়িতেই থাকতে হবে। কষ্ট হবে ভীষণ ওর। ওর বাবাকে দেখে ও খারাপ লাগে।শেষ বয়েসে একদম একা হয়ে গেলো মানুষটা।
ভগবান ওদের শক্তি দিক,ভালোভাবে মায়ের শেষকৃত্য সপন্ন করুক। ওর মায়ের আত্মা শান্তি পাক এইটুকুই চাই।জানি ঝুনুদি আমার জন্য যা করেছে আমি তার অর্ধেক ও করতে পারবো না, তবে আমি চেষ্টা করবো যতটা সম্ভব ওর পাশে থাকার। ও যাকে হারালো তার অভাব এই জীবনে কেউ পূরণ করতে পারবেনা তবে ও যাতে এর পরবর্তী জীবনে সুখী হয় এই প্রার্থনা করি।
আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। শুভরাত্রি।
একসাথে তোলা এই একটাই ছবি-(ঝুনুদি,শ্বেতা, আমি,টুসকি,বসে আছে ঝুনুদির বাবা ও মা)-