প্রিয়,
পাঠকগন,
আশাকরি আপনারা সবাই ভালো আছেন।
আজ আমার মনটা ভালো নেই, দিদি বাড়ি থেকে ফিরলাম, দিদির বাচ্চা দুটোকে খুব মিস করছি। তিতলি তো কিছুতেই আমায় আসতে দেবে না, অনেক বুঝিয়ে তবে এসেছি, একই বায়না তার,সেও আমার সাথে আমাদের বাড়ি আসবে, পিকলুর সাথে খেলা করবে আর ও কতো কি। তাকে প্রমিস করে আসতে হয়েছে কয়েকদিন বাদে তাকে নিয়ে আসবো। ওদের বাড়ি গেলে সবসময় পেছন পেছন ঘুরতে থাকে দুজন, তাই ফিরে আসলে মনটা একটু বেশিই খারাপ লাগে।
দিদিদের ফ্ল্যাট বিল্ডিং এর একদম টপ ফ্লোরএ। ছাদে গিয়ে যখন দাড়াই একটা কথা সবসময় মনে হয়, শহর বড্ড অসহায়, তার কোনো প্রাণ নেই। দুর দূরান্তে শুধু বড়ো বড়ো ব্লিডিং চোখে পড়ে, সবুজের দেখা নেই কোথাও। কেনো জানিনা আমার মনে হয় ওখানে নিঃশ্বাস নেওয়াও কষ্টকর।
আমার শ্বশুর বাড়ি দত্তপুকুর। বারাসাত থেকে আর ও একটু দূরে, যদিও এটা পুরোপুরি গ্রাম নয়,তবে যেটা আমার ভালোলাগে আমাদের এখানে শহরের পুরোপুরি ছাপ এখনো পড়েনি।
আমি ছোটো থেকেই সবুজের মাঝে বড় হয়েছি। মছলন্দপুরের ভিতরে "সলুয়া" নামক প্রত্যন্ত গ্রামে আমার বাপের বাড়ি, তাই এখানে বিয়ে হওয়ার পর মিস করতাম সেই সব দিন,যখন খোলা মাঠে ঘুরে বেড়াতাম, খেলা করতাম, বৃষ্টিতে ভিজতাম,সবুজ ঘাসের উপর হাঁটতাম, নদীর জলে কচুরিপানা তুলতাম, পুকুরে মাছ ধরতাম।
তাই যখনই শহরের দিকে যাই তখন মনে হয় আমাদের বাড়ির চারপাশ থেকে এখনও সবুজের ছোঁয়া পুরোপুরি হারিয়ে যায়নি। শহরে চলার পথে ছায়া দেওয়ার মত শুধু বড়ো বড়ো ফ্ল্যাট আছে, গাছের ছায়া আর নেই। সেদিক থেকে এখনো বোধহয় আমরা লাকী।
যদিও আমার শ্বশুড় বাড়ীতে জায়গা বড্ড কম, চাইলেও আসেপাশে কোনো গাছ লাগানোর উপায় নেই। কিন্তু চারপাশের বাড়ি গুলোতে জায়গা বেশী থাকায় তারা অনেক গাছ লাগিয়েছে, যেগুলো দেখলেও ভালো লাগে।
আমার মন খারাপ লাগলে আমি ছাদে গিয়ে বসি, আর গান শুনি।আর ছাদে বসি যখন বৃষ্টি নামে তখন। বৃষ্টি দেখতে ভীষণ ভালোলাগে আমার। আমাদের বাড়িতে জায়গা নেই ঠিকই তবে ছাঁদের উপরই আমি, আমার শাশুড়ি মা কিছু গাছ লাগিয়েছি, আমার শ্বশুর মশাই ও একটা পাতিলেবু গাছ লাগিয়েছেন, তাতে সারাবছর লেবু হয়, তবে সংখ্যায় কম হয়।
পাশের বাড়ীর কাকিমাদের ছাদেও অনেক গাছ আছে, আর আমাদের ছাদ থেকে পাশের অন্য একটা বাড়ির বাগান দেখা যায়, তাদের কলা গাছে এক কাঁদি কলাও হয়েছে, ভালো লাগে এই সব বসে বসে দেখতে, আর সময়ও কখন কেটে যায় বুঝতে পারিনা।
আর মনটাও যেনো ভালো হয়ে যায়, আমাদের ছাদের কিছু গাছ আপনাদের দেখাবো, আশাকরি ভালো লাগবে আপনাদের।
শিউলি ফুল (শেফালী) গাছ, এই ফুলের গন্ধ ভালো লাগেনা এমন মানুষ বোধহয় নেই, আমার এই ফুলের রঙ ও ভীষণ ভালো লাগে। এখন ফুল হচ্ছে না তাই ডাল গুলো কেটে দেওয়া হয়েছে। নতুন পাতার আশায় দিন গুনছে-
এইগুলোকে বিলাতি ধনে পাতা বলে, অন্য কোনো নাম জানানেই, ধনে পাতার মতই গন্ধ, ঘরে যখন ধনে পাতা ফুরিয়ে যায়, তখন প্রয়োজন হলেই তুলে নিয়ে রান্না করা যায়-
এগুলো অ্যালোভেরা (ঘৃতকুমারী) গাছ। ভীষণ উপকারী একটা গাছ, এটি চুলের জন্য,স্কিনের জন্য খুব ভালো, আমার শ্বশুর মশাই এই পাতার ভেতরের শাঁসটা প্রতিদিন খান, তাতে নাকী সুগার কম থাকে-
এটা একটা নাম না জানা ফুল গাছ, সাদা আর গোলাপী রঙের ফুল ফোটে, যখন ফুটবে নিশ্চয় ফোটো দেবো-
এটি টগর ফুল গাছ, সকল পাতা ঝরে গেছে, নতুন পাতা হচ্ছে, একই টবে আরেকটা ফুল গাছ লাগিয়েছি-
শ্বশুর মশাইয়ের লাগানো পাতিলেবু গাছে এখন ২টো লেবু আছে-
পাশের বাগানের কলা গাছে এক কাঁদি কলা হয়েছে-
কাকিমাদের ছাদের ফুল গাছ-