প্রিয়,
পাঠকগণ,
আজ আমি এমন একজনের কথা বলবো যে আমার মনের খুব কাছের। যদিও তাঁর দেশ অন্য,তবুও সে আমার ভীষণ আপন। আমি কথা বলছি "অদিতি"র। তার ডাকনাম "তিথী"।সম্পর্কে সে আমার মাসী হয়। আমার থেকে অনেকটা বড়ো, কিন্তু সম্পর্কটা একদম বন্ধুর মত।
সে বাংলাদেশে থাকে, বরিশালে তার বাড়ি, সেখানে সে কলেজের অধ্যাপিকা। ইংলিশ পড়ায়, তবে মনেপ্রাণে একবারেই রবীন্দ্রনাথের ভক্ত। তার লেখা বই পড়তে সে বড্ড ভালোবাসে।
আমার সাথে তার পরিচয় আমার বিয়ের পর।সে আমার শ্বশুর মশাইয়ের ভাগ্নির মেয়ে, হ্যাঁ এতটাই দূরের সম্পর্ক, আমিও ভাবিনি তার সাথে পরিচয় হলে এই দূরত্বটা বন্ধুত্বে বদলে যাবে। প্রথম যেই বার এলো,খুব ফর্মালিটি মেনটেইন করেছিলাম শুরুতে, কিন্তু যত দিন গেলো ততই যেনো সম্পর্কটা সুন্দর হতে লাগল।
একসাথেই খাওয়া দাওয়া করতাম,গল্প হতো কম বেশী, তবে কোনদিন পার্সোনাল লাইফ আমরা ডিসকাস করিনি,প্রথমবার এই ভাবেই কেটে গেলো।এরপর যখন তারা ফিরে গেলো,মাঝে মাঝে টেক্সট/ফোনে কথা হতো।
প্রায় ২ বছর পর আবার এলো ইন্ডিয়াতে, তার মাকে ডক্টর দেখাতে, তার নিজেরও ডক্টর দেখানোর দরকার ছিলো, মাসীর হাঁটুতে একটা অপারেশন হয়েছিল সেই বিষয়ে। ডক্টর দেখিয়ে তারপর আমাদের বাড়ি এসেছিল, সেবার একটু একটু নিজেদের গল্প শুরু হলো, বন্ধুত্ব বোধহয় তখন থেকেই শুরু। সেই বার দেশে ফিরে যাওয়ার আগের দিন আমরা একসাথে মার্কেটিং এ গিয়েছিলাম। ওই একদিনই ঘুরেছিলাম।
যখন সে চলে গেলো, মনটা খারাপ লাগলো, যাওয়ার পর অন্যবারের তুলনায় বেশী কথা হতে লাগলো।
২০১৯ সে আবার এসেছিল নিজের ডক্টর দেখাতে,তার বাবার সাথে,তার দাঁতেও ব্যাথা ছিলো, ডক্টরও দেখালো,দাঁত ফেলতেই হলো তার, বেশ কষ্ট পেয়েছিল।এরপর সে আমার কাছে তার নিজের জীবনের কথা বললো, কতটা কষ্ট তার মনে জমে ছিল তার হাসি দেখে কখনই বুঝতে পারিনি। আর এটাও সত্যি,ভালো মানুষের সাথে খারাপ হওয়াটাই বোধহয় নিয়তি।
সে আজও বিয়ে করেনি, ভালবাসা মানুষকে কতো কিছু শেখায় সেটার আরেকটা উদাহরণ তিথী মাসি।অনেক বোঝাই তাকে,জীবন এইভাবে চলতে পারেনা।সে বলেছে যদি তাকে বোঝার মতো কাউকে পায় তবেই জীবনে বিয়ের কথা ভাববে।আমি নিজেও তাকে অনেক কথা বলি আর কি সুন্দর ভাবে সে আমায় বোঝায়, জীবনকে দেখার তার দৃষ্টিকোণ একেবারেই অন্যরকম।
লাস্টবার সে শান্তিনিকেতন গিয়েছিল, রবীন্দ্রনাথ তার কতো প্রিয় সেবার বুঝতে পারলাম। আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য খুব জোর করেছিল কিন্তু আমি যেতে পারিনি। গেলে হয়তো ভালোই হতো, দুজনের আর ও অনেক কিছু স্মৃতি জমা হতো। সত্যি বলতে জীবন একটু একটু করে ফুরিয়ে যাচ্ছে,আমরাও শেষ হচ্ছি,যা জমা হচ্ছে সেগুলো শুধু স্মৃতি। শেষবার অনেক মজা করেছি, একসাথে ঘুরেছি, মার্কেটিং করেছি,সে আমাকে শাড়িও গিফট করেছে। বড্ড ভালো মেয়েটি। ভগবান ওকে যেনো সুখী করে এটাই চাই।
২০২০ তে মনে হয়েছিল আর কি আমরা দেখা করতে পারবো? যখন এত কঠিন সময়ের দিয়ে যাচ্ছি খবর পেলাম তিথী মাসির কোভিড-১৯ ধরা পড়েছে,মনটা কেপে উঠলো,দুর দেশে সে আর আমি এখানে, করার মতো কিছুই নেই প্রার্থনা ছাড়া।প্রতিদিন খবর নিতাম,ভগবানের ইচ্ছায় সে এখন সুস্থই আছে,জনিনা আবার কবে সে এই দেশে আসবে, আবার কবে এক সাথে বসে গল্প করবো, ফুচকা খাবো, ঘুরবো।
তবুও আশা করে আছি আমাদের আবার দেখা হবে। প্রথমদিন আমি যখন তাকে দেখেছি, আমি ভাবিনি সে আমার এতো কাছের মানুষ হয়ে উঠবে।
যাইহোক,ভালো লাগলো তার কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করে,আসলে আমরা একসাথে কাটানো সময়ের কথা বলতে পারি,লিখতে পারি, কিন্তু সম্পর্কের অনুভূতি বা তার গভীরতা ভাষায় প্রকাশ করতে পারিনা।
ভালো থাকবেন সবাই, শুভরাত্রি।
ফুচকা খাওয়ার স্মৃতি-