"বান্ধবী"নামের স্বার্থকতা

in blurtindia •  4 years ago 

IMG-20180301-WA0027.jpg

প্রিয়,
পাঠকগণ,
আশাকরিআপনারা সবাই ভালো আছেন।

আজকে আমি সেই মানুষটার সম্পর্কে কথা বলবো, যে আমার সবথেকে কাছের বান্ধবী। আমার মনে পড়ে না ঠিক কবে থেকে আমাদের সম্পর্ক এত গভীর হয়েছে। সত্যি বলতে যখন বন্ধুত্ব শব্দের মানেও জানতাম না তখন থেকেই তাকে বন্ধু বলে জেনে এসেছি, আর আজও সেই সম্পর্ক একই রয়ে গেছে।
ওর ভালো নাম রাখী বিশ্বাস, তবে আমরা সবাই ওকে ঝুনু বলেই ডাকি। ওটাই ওর ডাকনাম।

আমাদের কখনই ঝগড়া হয়নি এটা বললে মিথ্যে বলা হবে, তবে তার জন্যে যে আমরা ২ দিন কথা বলিনি এমনটা কখনই হয়নি। এমনই সম্পর্ক আমাদের। আমাদের বাড়ির সবাই বলে আমরা নাকি "বার্লি খাওয়া বান্ধবী"।

এর একটা গল্প আছে। আসলে আমি যার কথা বলছি সে আমার থেকে ২ বছরের বড়। আমাদের বাড়ির একদম পাশেই তাদের বাড়ি।মা বলতো ছোটো বেলায় আমাকে খাওয়ানোর জন্য মা বার্লি রান্না করলে তাঁকেও দিতে হতো। তাই মা তার জন্যও রান্না করতো।আমাকে খাওয়ানোর সময়ে সে পাশে বসে থাকতো। যাতে আমার খাওয়া হয়ে গেলে সে আমার সাথে খেলতে পারে।আমাকে খাওয়ানোর জন্য বাটিতে নামিয়ে নেওয়ার পর বাকিটা মা তাকে দিত।এই ভাবেই বেড়ে ওঠা আমাদের। আরএই জন্যই সবাই আমাদের "বার্লি খাওয়া"বান্ধবী বলে ক্ষ্যাপায় ।ছোটো থেকেই তার সাথে আমার বড্ডো ভাব।

এরপর আস্তে আস্তে বড় হলাম।তার সাথেই আমার বেড়ে ওঠা,স্কুল যাওয়া, খেলাধুলা, খাওয়া দাওয়া সব কিছু।
আমার মনে পড়ে স্কুল লাইফ এর একটা ঘটনা। আমরা একসাথেই স্কুল এ যেতাম। আমাদের একটা গ্রুপ ছিলো। মোটামুটি ৫-৭ জন দল বেধে হেঁটে হেঁটে যেতাম। কিন্তু যেহেতু আমি তার থেকে ১ ক্লাস নিচে পড়তাম তাই আমার খুব মন খারাপ থাকতো,কেনো না আমি স্কুল এ গিয়েও তার সাথে ক্লাস করতে পারিনা। আমার আগে ছুটি হলেও আমি অপেক্ষা করতাম তারপর এক সাথে ফিরতাম।
আমার যখন ক্লাস ৬, সেইবার ফাইনাল পরীক্ষায় সে ফেল করলো, অথচ মনখারাপ এর বদলে আমার কি ভীষণ আনন্দ, এইবার আমরা একসাথেই ক্লাস করবো। ভগবান কে শুধু ডাকছিলাম যাতে সেকশান টাও এক হয়। ভগবানের ইচ্ছায় হয়েও গেলো,কি যে ভালো ছিলো ওই বছরটা সেটা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। দেখতে দেখতে ফাইনাল পরীক্ষাও চলে এলো, যেদিন রেজাল্ট দিলো আমার তো ভীষণ টেনশন আমরা পাশ করবো তো, নাহলে আবার আলাদা হয়ে যাবো। আমার মায়ের মত তার দাদাও গেছে রেজাল্ট দেখতে,গিয়ে দেখে আমি ভীষণ কান্না করছি, আমার মা, ঝুনুদির দাদা সবাই বোঝাচ্ছে কান্না করিস না পরের বার ঠিক পাস করবি।ঠিক এই সময় ঝুনুদি বলে উঠল-" ফেল টুকি নয় আমি করেছি।"
(ঝুনিদি আমাকে টুকি বলেই ডাকে,ওটা আমার ডাকনাম)। মনটা সেদিন খুব খারাপ ছিল আমি কেনো পাশ করে অন্য ক্লাস এ উঠলাম এটা ভেবে।

আজ সত্যিই হাসি পায় সেইসব কথা ভাবলে, তবে হ্যাঁ এটা ভাবলে ভালো লাগে যে স্কুল লাইফটা দারুন মজার ছিল. এখনকার বাচ্চা গুলো কে দেখি আর ভাবী হয়ত আমরা এত কিছু জানতাম না, মোবাইল,কম্পিউটার, ল্যাপটপ সব অজানা ছিল। কিন্তু আমাদের বন্ধুত্ব ছিল, খেলা ছিল, দুষ্টুমি ছিল, অনেক ভালোবাসা ছিলো।

এরপর আর ও বড়ো হলাম, কলেজ এ গেলাম সেখান থেকে ইউনিভার্সিটি।আমি এম,এ করেছি বর্ধমান ইউনিভার্সিটি থেকে আর ঝুণুদি কল্যাণী থেকে। পড়ার জায়গা চেঞ্জ হয়েছে কিন্তু ভালোবাসা কমেনি এতটুকুও।

আরও একটা ঘটনা শেয়ার না করে পারবো না। আমার মা যাওয়ার ২ বছর পর আমার বিয়ে হয়। মায়ের সব কাজকর্ম মিটে যাওয়ার পর আমি কয়েকদিন মামা বাড়ি ছিলাম কারন বাড়িতে থাকতে তখন কষ্ট হতো খুব।সব জায়গায় যেন মা কে অনুভব করতাম। এরপর যখন বাড়ি গেলাম রাতে শোয়া নিয়ে সমস্যা।আমি একা শুতে ভয় পাচ্ছিলাম, আর বাবার সাথে শোয়া সম্ভব নয়, অগত্যা ঝুনুদি আমার সাথে রাতে ঘুমাতে শুরু করলো। আর তারপর থেকে আমার বিয়ের রাত পর্যন্ত প্রতিটা রাত ও আমার কাছে শুয়েছে।

আপনারা শুনলে বিশ্বাস করবেন না,ওর নিজের মামার ছেলের বিয়ে ছিলো।ও আমাকে বললো-"বিয়ের দিন তো আমি বাড়ি আসতে পারবোনা,ওই দিনটা তুই একটু মামা বাড়ী গিয়ে থাকিস।পরদিন আমি চলে আসবো, আর বৌভাত তো মামাবাড়ি হবে আমি খেয়ে রাতে দাদাকে নিয়ে চলে আসবো, একটু রাত হবে হয়তো তুই টিভি দেখতে থাকিস আমি এসে তোকে ফোন করলে দরজা খুলিস।"

সত্যিই ও তাই করেছিল, আর সেদিন আমি বুঝেছিলাম ও কতো বড় মনের মানুষ,শুধু আমার সাথে শোয়ার জন্যে ও ফিরে এসেছিল। কারণ ও জানত আমি থাকতে পারবনা। ও একবারও বলেনি আমি বাড়ি থাকবনা,তুই ৩-৪ দিন মামাবাড়ী থাক। এটাই ঝুনুদি।

আমিও হয়তো এতো করতে পারতাম না, আজ ও আমি একা বাড়ী গেলে রাতে ওর কাছে ঘুমাই। ওকে ফোন করে শুধু বলি আমি আসছি,গিয়ে দেখি আমার পছন্দ মতো কিছু না কিছু ও রান্না করছে। এক বেলা আমাকে খেতেই হবে ওদের বাড়ী। এরপর যে কয়েক দিন থাকি সেই আগের মত একসাথেই খাওয়া দাওয়া হয়,গল্প হয়, পুরনো কথা মনে করে মন খুলে হাসা হয়।

ও এখন চাকরির জন্যে পড়াশুনা করছে,আমি সত্যিই মন থেকে চাই ওর স্বপ্ন পূরণ হোক,ও ভালো থাকুক।আমি জানিনা সবার জীবনে এমন বান্ধবী থাকে কিনা কিন্তু আমি খুব লাকি যে আমার ছোট্ট বেলার বান্ধবী আজও আমার সাথেই আছে। হয়তো রোজ আমাদের কথা হয়না, দেখা হয়না, কিন্তু মনের টান এতো টুকুও কমেনি, আর আমি জানি ওর দিক থেকেও একই উত্তর আসবে।

ভালো থাকিস ঝুনুদি, খুব ভাল হোক তোর। যেখানেই থাকি তুই জানবি আমি আছি তোর সাথে। অনেক ভালোবাসা তোর জন্যে।

তোর টুকি

আমার প্রথম ফোন এ তোলা ফোটো-২০০৯-২০১০ সাল বোধহয়
Image036.jpg

৩ বছর আগে হাজারদুয়ারি বেড়াতে গিয়ে তোলা।সাথে আমার ছোটদির মেয়ে-
IMG_20201224_204611.jpg

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE BLURT!