প্রিয়,
পাঠকগণ,
আশাকরি সবাই ভালো আছেন।
আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো আমার জীবনের একটা অধ্যায়ের কথা। আমরা আমাদের জীবনে চলার পথে কতো মানুষের সাথে পরিচিত হই। তাদের সাথে কাটানো সময়গুলো আমাদের মনের কোণে এমন ভাবে জমা থাকে,যেনো সেগুলো অমূল্য সম্পদ। হয়তো অনেক খারাপ অভিজ্ঞতা হয়,তবে সময়ের সাথে সাথে সেগুলো ভুলে আমরাও ভালো স্মৃতি গুলোই মনে রাখি।
আমার জীবনের বেস্ট টাইম ছিলো ২০১০-২০১২ এই ২সাল। আমার এম, এ করার সময়। আমার মনে পড়ে প্রথন দিন বর্ধমান যাওয়ার কথা। প্রথমে ভেবেছিলাম এম, এ করবো না,কারন তখন মায়ের শরীর বেশ খারাপ থাকতো। তাই রেগুলার ক্লাস অ্যাটেন্ড করা সম্ভব ছিলো না,পড়ে অবশ্য ঠিক হলো ডিসটেন্স এ এম, এ করবো। সেক্ষেত্রে ৬ মাস পড়ে গিয়ে ৭দিন ক্লাস করা যাবে। আর বছরের শেষে গিয়ে এক্সাম দিলেই হবে।
ফলে সেটাই ফাইনাল হলো,ছোটদি আমাকে সাথে নিয়ে বর্ধমান গেলো, সেখানে গিয়ে দেখি কলেজের ২জন বান্ধবী, আর স্কুল লাইফ এর ২জন মেয়ে যাদের ঠিক বান্ধবী বলা যায়না। কারণ তাঁদের সাথে একই ক্লাস এ পড়লেও তাঁদের সাথে বন্ধুত্ব হয়নি আমার। তাদের গ্রুপটা আলাদা ছিলো বরাবর।
ফর্ম ফিলআপ হলো, ভর্তি কমপ্লিট হলো, আমরা যেহেতু একই দিকে ফিরবো, তাই সবাই আমার দিদির সাথেই রওনা করলো। আমরা স্টেশন এ দাড়িয়ে আছি, সবাই ভাবছি কিভাবে এতদূর এসে আমরা একা একা থাকবো। দিদি বললো- "ভয় পাস না, দেখবি একটা সময় এই জায়গা গুলো তোদের একদম চেনা হয়ে যাবে।"
সত্যি তাই হলো, প্রথম যে বার ক্লাস করতে গেলাম, বাবা আমার সাথে গিয়েছিল। সেখানে গিয়ে আমরা একটা লেডিস হোস্টেল ভাড়া করে ছিলাম, সেখানে খাবারের ব্যবস্থাও ছিলো। বাবা পরদিন চলে এলো, শুরু হলো সবার সাথে একসাথে থাকা। ২জন কে যেহেতু চিনতাম তাই খুব সমস্যা হয়নি, বাকি দুজনের মুখ চেনা, এবার আস্তে আস্তে তাদের সাথে মেশা শুরু হলো।
এই চারজন হলো- গার্গী, দীপা (কলেজের বান্ধবী)প্রিয়াংকা, জুয়েলী (স্কুল এর মুখ চেনা ২জন),অন্য জন হলাম আমি। শুরু হোলো ৫ জনের পথচলা।একসাথে খাওয়া, ইউনিভার্সিটি যাওয়া, ফুচকা খাওয়া, বেড শেয়ার করা, ঘুরতে যাওয়া,সব কিছু একসাথে। দারুণ কাটলো দিন গুলো, এতো ভালো,যা হয়তো ভর্তি হতে যাওয়ার দিন ভাবিনি।
ট্রেন এ আসার সময় আর ও মজা হতো। ট্রেন ঢুকলে দৌড়ে সিট রাখা, ঝাল মুড়ি খাওয়া, একে অন্যের ঘাড়ে মাথা দিয়ে ঘুমানো,সব কিছু, একে অন্যের পরিবার হয়ে উঠতাম আমরা ওখানে থাকাকালীন।
দিনগুলো কেটে গেছে,সবই আজ অতীত তবে স্মৃতি গুলো বড্ড ভালো, বড্ড মিস করি দিনগুলো, দিনগুলো ফিরে পেলে কোনোকিছু না ভেবেই আবার হয়তো চলে যাবো। আমরা যে হোস্টেল এ থাকতাম সেখানকার কাকু কাকিমাও ভীষণ ভালো ছিলো। ওখানে যখন থাকতাম,খেতে যেতাম কাকীমা অনেক যত্ন করতো, মনেই হতনা বাড়ী থেকে দূরে আছি। ২বছরে প্রতিবার আমরা কাকুর হোস্টেলেই থেকেছি।খুব ভালো সম্পর্ক হয়ে গেছিলো আমাদের।
আজ অনেক বছর হয়ে গেলো, কিন্তু স্মৃতি গুলো এখনো টাটকা। এখনো যোগাযোগ আছে সবার সাথে, তবে জুয়েলীর বিয়ের পর আর কথা হয়নি, ও এখন এক মেয়ের মা।ওর হাওড়া তে বিয়ে হয়েছে। দীপার সাথে কথা হয়,ওর এক ছেলে, বারাসাত বিয়ে হয়েছে।
প্রায়ই কথা হয় প্রিয়াংকা আর গার্গীর সাথে।ওদের ২ জনেরই বিরাটি বিয়ে হয়েছে, কাছাকাছিই থাকে। গার্গীর একটা মেয়ে। হ্যাঁ,সবাই মা হয়ে গেছে,বাকি আছি আমি আর প্রিয়াংকা। এবার আমাদের পালা আর কি।
আর আমি আছি দত্তপুকুর। সংসার করছি, জব করছি, সময় কেটে যাচ্ছে। ভালোই আছি, তবে জীবনের বেস্ট টাইম মিস করি ভীষণ ভাবে। কোনো চাপ ছাড়া নিজেদের মতন করে কাটানো দিনগুলোর মজাই আলাদা। কোনদিন ভাবিনি স্কুল এ যাদের সাথে কথাও বলতাম না,তারাই এত কাছের হয়ে যাবে কখনো। জীবন মানুষকে অনেক কিছু শেখায়।
কাল কি হবে আমরা কেউ জানিনা, তাই আজ টাকে ভালো ভাবে বাঁচতে হবে, অনেক লড়াই আসবে জীবনেএটা যেমন সত্যি তেমন জীবন এমন অনেক উপহার দেবে যার কোনো মুল্য হয়না।
যাইহোক, আজ আমরা রোজ কথা বলিনা, দেখাও হয়না তবুও যে যেখানে থাকিস ভালো থাকিস, সুস্থ থাকিস। খুব মিস করি তোদের, একসাথে কাটানো দিনগুলো। জানি ব্যস্ততার ফাঁকে সময় পেলে তোরাও ভাবিস যদি দিনগুলো ফিরে পেতাম।ভালো থাকিস বন্ধু,ভালো থাকিস।
গার্গী আর ওর মেয়ে-
দীপা আর ওর ছেলে-
জুয়েলী আর ওর মেয়ে-
আমি আর প্রিয়াংকা-