প্রিয় পাঠক গণ,
আমি আজ আপনাদের সামনে আমার জীবনের কিছু গল্প শেয়র করতে চলেছি। আশাকরি আপনাদের ভালো লাগবে।আসুন শুরু করি,
মা শব্দ টা ছোট হলেও পুরো পৃথিবীর সকল ভালোবাসা এই ডাক টার কাছে হার মানে। কথায় আছে মানুষ দাঁত থাকতে দাঁতের মূল্য বোঝেনা। আমিও তত দিন পর্যন্ত মায়ের উপস্থিতির মূল্য বুঝতে পারিনি যত দিন পর্যন্ত মা বেচেঁ ছিলো।
সালটা ২০১১, ২৩সে অক্টোবর দুপুর ১.১৫.
এই দিনটিতে আমার মা এই পৃথিবীর সাথে সাথে আমাদের সকলের মায়া ত্যাগ করেন। প্রসঙ্গত বলে রাখি আমার মায়ের বোন ক্যান্সার হয়েছিল এবং যখন ধরা পড়ে তখন লাস্ট স্টেজ।
আজকে আমি জীবনের একটা নতুন অধ্যায় শুরু করতে চলেছি এই প্ল্যাটফর্ম এর মাধ্যমে তাই প্রথম লেখাটা আমার মাকে উৎসর্গ করছি। আশাকরি আপনাদের সকলের সাপোর্ট আমি পাবো।
আমাদের পরিবার নিম্নমধ্যবিত্ত। আমরা ৩বোন।বাবা সামান্য ব্যাবসা করত, মা গৃহবধূ। অনেক কষ্ট করেই আমরা বড়ো হয়েছি। বড়দি স্কুল টিচার, ছোটদি একজন নার্স। আর আমি গ্রাজুয়েঅ্যাশন কমপ্লিট করে এম. এ ভর্তি হয়েছি। এবং সেই সময় আমার ফুড করপোরেশন এ একটা জব হয়েও যায়। কিন্তু আমি সেই সময় জয়েন করতে পারিনি।কারন মা তখন আমায় ছাড়তে চায়নি। মায়ের কথা তখন ফেলতে পারিনি। মা তখন পুরোপুরি আমার উপর ডিপেন্ড করে।তাকে খাওয়ানো, স্নান করানো যাবতীয় কাজ আমাকেই করতে হতো। হটাৎ করে কখন যেনো আমি মা হয়ে উঠলাম বুঝতে পারিনি।কখনও রান্নাঘরে না যাওয়া মেয়ে টাও সংসারী হয়ে উঠলো।
আজও মনে পড়ে যেদিন প্রথম মায়ের অসুস্থতার কথা জানলাম সেদিন দিদির সাথে ওর শশুর বাড়ি যাচ্ছি অটো রিকশা তে বসে আছি দিদি আমার হাত চেপে ধরে বললো-" সোনা , মা এর ক্যান্সার হয়েছে ডক্টর বলেছে যদি ৬ মাস ও বেচেঁ থাকে ভাববেন অনেক।"
পায়ের তলার মাটি যেনো সরে গেলো, আর মাত্র ৬ মাস? কিরে বাঁচবে মাকে ছাড়া? মা তো দিব্যি সুস্থ তাহলে এত বড় রোগ কোথায়?
হ্যা মাঝে মাঝে বলে হাত পা ভীষণ ব্যাথা, তাও তো সব করে। মায়েরা এমন ই হয়ে হাজার কষ্টেও তারা হাসি মুখেই থাকে।
আস্তে আস্তে তাকে বিছানায় পড়তে দেখলাম যে আমাকে বিছানা থেকে নামতে শেখালো,তাকে স্নান করালাম যে আমায় স্নান করাত,তাকে খাওয়াতাম যে আমায় কোলে নিয়ে খাইয়ে দিত।জীবন সম্পূর্ণ পাল্টে গেলো।একদিন মা বললো দিদিরা কেউ নেই তুইও যদি চাকরি করতে চলে যাস তাহলে আমি কি করবো। আর কিছু ভাবিনি মায়ের একটা কথা আমার সবটা পাল্টে দিলো। আজ অনেকেই বলে সেদিন তুই জয়েন করতে পারতিস, কিন্তু সেদিন ওই জায়গায় দাঁড়িয়ে আমি পারিনি তাই বলে আজ কোনো আফসোস ও নেই আমার।এক জীবনে সব পাওয়া হয়না।সেদিন মায়ের পাশে থাকাটা আমার বেশি প্রয়োজন মনে হয়েছিল।
মা চলে যাওয়ার ২ সপ্তাহ আগে আমার এক্সাম শুরু হয় আমি সেদিন বাড়ি ফিরছি ট্রেন তখন হাবড়া বাড়ি থেকে ফোন এলো, রাস্তা কিছুতেই শেষ হয় না। যখন বাড়ি পৌছালাম বাড়ি ভর্তি লোক মনেহলো সব শেষ। ঘোরে ঢুকে দেখি মায়ের পাশে সবাই। মামী বলল খেয়ে নে , মা নাকি বারবার বলছিল সোনা খেয়েছে?
কোনরকমে একটু খেলাম ভেতরে যেনো সব কিছু শেষ হয়ে যাচ্ছে কিছু বুঝেতেই পারছিনা।
আমি মায়ের বুকে মাথা দিয়ে শুয়ে আছি ছোট্টো বেলার মতো। চাইলেও মা আমার মাথায় হাত দিতে পারছে না। হয়ত অনেক কিছু বলার আছে অথচ আজ মুখও আজ নির্বাক সময় যে প্রায় শেষ।মা তাকিয়ে আছে দিদির দিকে দিদি বললো মা তুমি চিন্তা করোনা সোনার জন্য আমি আছি,একফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো মায়ের চোঁখ থেকে। যেন নিশ্চিন্ত হলো এবার মা বাবা কে খুঁজছে,j মানুষটার হাতধরে এতগুলো বছর চললো তাকেও যে ছেড়ে যাওয়ার পালা। বাবা এলো মায়ের সিথিতে সিঁদুর দিলো আরো একবার, বলাযায় শেষ বার। অদ্ভুত নিয়তির খেলা সিঁদুর পরিয়ে বাবা হাতটা সরানোর আগেই সব শেষ।
মা চলে গেল। আমাদের সবাই কে ছেড়ে সারাজীবনের মত, কোনো কিছুর বিনিময়ে যেখান থেকে কেউ ফিরে আসে না। সেই না ফেরার দেশে।
আজ এতগুলো বছর পরেও যেন ঐ খালি জায়গাটা খালি ই থেকে গেলো। হয়ত প্রতিদিনের চাপে প্রতিটি মুহূর্তে তাকে মনে পড়ে না তবে যেকোনো কঠিন সময়ই মনে মা থাকলে সব ঠিক হয়ে যেত।
সবশেষে একটাই কথা বলবো আমরা সেই মানুষ টিকে ভালবাসার কথা বলি যার কাছে স্বার্থ ফুরোলেই ভালোবাসা শেষ হয়ে যায় কিন্তু সেই মানুষটিকে বলি না যার কাছে আমার পরিপূরক আর কেউ নেই।
আমিও কোনোদিন এই কথাটা ভেবে দেখিনি যে মা কেও বলার প্রয়োজন ছিলো আমি ভালোবাসি তোমায়।
তাই আজ বলতে চাই যদি মা কোনো ভাবে শুনতে পারে -"পৃথিবীতে নয় নাই বা থাকলে দূরের কোনো মহাকাশেই যদি থাকো, কিন্তু বিশ্বাস করতে পারিনা আজও,,,
মাথার উপর এই মহাশূন্যের ভার যে কি অসহনীয় মা.... তোমাকে তো কখনও মুখ ফুটে বলাই হয়নি আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি"
যেখানেই থাকো ভালো থেকো মা। মিস ইউ।