প্রিয় বন্ধুরা,
আশাকরি সবাই ভালো আছেন।
আজকে আমি আমার জীবনের কোনো গল্প শেয়ার করবো না।আজ শেয়ার করবো আমার শাশুড়ির মায়ের হাতের তৈরী পিঠের ছবি।কাল রাতে মা (শাশুড়ি) পিঠে তৈরী করছিল,তাই ভাবলাম আপনাদের সাথেও শেয়ার করি, আশাকরি দেখে আপনাদের ভালোই লাগবে। কাল শুধু সাজ পিঠে তৈরী হয়েছে, যাকে অনেকেই কাঁচি পোড়া/চিতাই পিঠেও বলে থাকে।
আপনারা সবাই জানেন পৌষ মাস মানেই পিঠেপুলির মাস। বাঙালির ঘরে ঘরে এই মাসটা একটা পার্বণের মতো পালিত হয়। সময়ের সাথে সাথে যদিও অনেক কিছু বিলুপ্তির পথে,তবুও ছোটো বেলার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই পিঠেপুলির সাথে। আজ সেগুলোই শেয়ার করব।
শীতকালে আমরা সবাই কমবেশী পিঠাপুলি খেয়ে থাকি।এই সময়ের নতুন খেজুরের গুড়ের পায়েস ও ভীষন ভালোলাগে। যদিও আজকাল খাঁটি গুড় পাওয়া খুবই কষ্টের।এখনকার দিনে এতো বেশী ভেজাল আমরা খেয়ে থাকি যে,আসলের স্বাদ সবাই ভুলে গেছি, আবার এমন অনেকে আছেন যারা সেই স্বাদ কখনো পাননি।
বর্তমান যুগে আমরা সকলেই ঘড়ির কাঁটার সাথে পাল্লা দিয়ে চলি। তবু এই সময় এলেই আমার মনে পড়ে,খুব ছোটো বেলায় মা যখন পিঠে করতো,আমরা উনুনের পাশে বসে থাকতাম গরম গরম পিঠে খাওয়ার জন্য। খেজুরের গুড়ের (অবশ্যই ঝোলা গুড়) সাথে গরম সাজের পিঠে খাওয়ার যে কী মজা ছিল,সেটা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। কিন্তু সব কিছুই এখন অতীত। সেইদিন আর কখনোই ফিরে আসবেনা ভেবেই মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে যায়।
এখন তো আমাদের সেই সময় নেই, ধৈর্য্য নেই, অনেকে জানিও না কি ভাবে বানায়, কতরকম পিঠে হয়। এখন সবাই মিষ্টির দোকানের ভরসায় থাকি। দোকানে বিক্রী শুরু করলে কিনে এনে খাই,ব্যাস এইটুকুই পিঠা পুলির মজা।
এখন ঢেঁকি তো প্রায় বিলুপ্তির পথে, খুব গ্রাম এলাকায় হয়তো বা আছে, তবে তা প্রায় ব্যবহার হয়না বললেই চলে।
আগে দেখতাম পাড়ার সবাই একসাথে চাল (আতপ) ভেজাত, একসাথে গিয়ে এক এক করে ঢেঁকি পারতো আর চাল ভেঙে গুড়ি তৈরি করতো। আর পৌষ মাসের সংক্রান্তির দিন গোটা পাড়া জুড়ে পিঠে তৈরী হতো। কতো মজার দিন ছিলো সেইসব, কার বাড়ী কি পিঠে হলো, কাদের টা বেশি ভালো, কাদের কোনটা বানায় নি, সেই সব নিয়ে গল্প হতো। একে অন্যের বাড়িতে গিয়ে পিঠে খাওয়া চলতো ২/৩ দিন ধরে।
এখন ঘরে ঘরে গ্যাস এসে গেছে,তার সাথে ননস্টিক/লোহার প্যান ও। আর আগে মায়েদের দেখতাম,তারা দেখে শুনে মাটির সাজ কিনত,যাতে ফাটা না থাকে,ওপরের ঢাকনা যেন ভালো ভাবে লাগে,না হলে ভাপ বেড়িয়ে যাবে আর পিঠে ভালো হবে না।
উনুনের প্রচলন তো শহরের দিকে উঠেই গেছে, গ্রামের দিকে এখনও কিছু বাড়িতে আছে, অনেকে ধান সিদ্ধ করার করার জন্য ব্যবহার করে।
তবে আমার শাশুড়ি নিজেই উনুন তৈরী করেন। শীতকালে আমরা সেই উনুনে স্নানের জল গরম করি, আর মা সাজ পিঠে তৈরী করে, ভাপা পিঠা তৈরী করে। আর চালের গুঁড়া তৈরী করতে ঢেঁকির পরিবর্তে শিলনোরা/মিক্সী ব্যবহার করা হয়।
আতপ চাল ৩/৪ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে গুড়া তৈরী করতে হয়। তারপর গরম জলের সাথে মিশিয়ে ব্যাটার তৈরী করতে হয়, অল্প লবণ মিশিয়ে দিতে হয়। তারপর উনুন ধরিয়ে সাজ বসিয়ে সেটিকে একটু গরম করে নিতে হয়। এরপর ব্যাটার দিয়ে ঢাকা দিয়ে পিঠে তৈরী হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তারপর কাঁচি দিয়ে আস্তে আস্তে তুলে ফেলতে হবে। আর প্রতিবার ব্যাটার দেওয়ার আগে সাজটা একটা টুকরো কাপড় দিয়ে সাদা তেলে ভিজিয়ে মুছে নিতে হবে যাতে পিঠে টা ভালোভাবে উঠে আসে।
ব্যাস এরপর গরম গরম খেতে পারেন।এই পিঠে গুলোই দুধ ফুটিয়ে তাতে খেজুরে র গুড় মিশিয়ে সারারাত ভিজিয়ে রাখলে পরদিন খেতে দারুন লাগে।এর মধ্যে অনেকেই তেজপাতা/এলাচ দিয়ে থাকেন যাতে একটা সুন্দর গন্ধ পাওয়া যায়।
আজ আমাদের বাড়ির পিঠে তৈরী আপনাদেরকে শেয়ার করলাম।
ব্যাটার রেডি-
সাজটা লোহার, উনুনে বসিয়ে দিয়েছে মা-
উনুন ধরিয়েছে, সাজ গরম হচ্ছে-
সাজ এ ব্যাটার দিচ্ছে,
পিঠে তৈরী
এবার নামানোর পালা, এক্ষেত্রে কাঁচি ব্যবহার হয় তাই এর নাম কাঁচি পোড়া-
হটপট এ রাখা হয়েছে যাতে গরম থাকে-
দুধে ভেজানোর পর, এটাকে ভেজানো পিঠেও বলে অনেকে-
না দিয়ে খাস না পাগল। পেট খারাপ হলে আমার দোষ নেই।🤭😃