প্রিয়,
পাঠকগণ,
আশাকরছি আপনারা সবাই ভালো আছেন।আজ ক্রিসমাস,মানে বাঙালির বড়দিন। আমার পক্ষ থেকে আপনাদের এবং আপনাদের পরিবারের সবাইকে অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
আজকে আমি আপনাদেরকে আমার জীবনের কোনো এক বছরের ক্রিসমাসের গল্প বলবো। সালটা আমার ঠিক মনে নেই,তবে ঘটনাটা শেয়ার করলে আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।
তখন আমি বেশ ছোটো, তখনকার দিনে বড়দিন মানেই পিকনিক (চড়ুই ভাতি) করার জন্যে একটা দারুন দিন, ডিসেম্বর এর শুরু থেকেই জল্পনা কল্পনা চলতো কি কি রান্না হবে, কে কে পিকনিক করবে,কতো টাকা করে দিতে হবে এইসব আর কী।
তখন কার সময়ে এখনকার মতো ঘরে ঘরে টিভি ছিলো না। পাড়ার মধ্যে যাদের আর্থিক অবস্থা অনেক ভালো ছিলো তাদের ঘিরেই টিভি থাকতো, আর এই কারনেই পাড়ার সবাই মিলে টাকা দিয়ে মাঝে মাঝে ভিডিও (ভি.সি.আর)আনা হতো।পড়ে যখন সেগুলো বন্ধ হলো তখন এলো ডি.ভি.ডি. প্লেয়ার, সিডি এইসব।
তাই সেই বার ঠিক করা হলো যে,বড়দিনে পিকনিক এর সাথে সাথে ভিডিও আনা হবে, টাকা তো বেশী নেই, তাই আমরা সবাই ভাবলাম যে টাকা দিয়ে ভিডিও ভাড়া করা হবে, আর প্রত্যেকের বাড়ি থেকে চাল, তেল, ডিম, আলু এই সব নিয়ে ডিমের ঝোল আর ভাত,এই পিকনিক করা হবে।
সেটাই করা হলো। ভিডিও চালানোর নিয়ম ছিলো সন্ধ্যা বেলা পরপর ২ বাংলা সিনেমা চলবে মায়েদের জন্যে,তারপর আমাদের পছন্দ মতো হিন্দি সিনেমা চলবে সারা রাত ধরে। এইবারও তাই হল।বাংলা সিনেমা চালিয়ে দিয়ে আমরা রান্না করতে চলে গেলাম, এবং রান্না শেষে খাওয়া দাওয়া করে রেডী হয়ে বসে পড়লাম সিনেমা দেখতে।
কি ভীষণ শীত, গায়ের মধ্যে কম্বল মুড়ি দিয়ে আমরা বসতাম ঝুনুদিদের বাড়িতে একটি রুম এর মধ্যে। ওটাই ছিল আমাদের জায়গা। ওদের পোল্ট্রি ফার্ম আছে। যদি মুরগির বাচ্চা না থাকতো তখন সেখান ই আমরা দেখতাম কিন্তু সেইবার ঘরেই দেখতে হয়েছিল।
ভিডিও ভাড়া করা/ক্যাসেট আনা/চালানো এইসব দায়িত্ব থাকতো বড়দের (ঝুনু দির দাদা,গোপাল কাকু)। আমরা প্রথমে একটি সিনেমা দেখলাম,ঘুম ঘুম পাচ্ছে, এরপর নতুন আরেকটা ক্যাসেট দিল, একটু পরেই আমরা সবাই একজায়গায় চলে এসেছি,ভয়ে জড়সড়। কারণ দাদারা শয়তানি করে ভূতের সিনেমা নিয়ে এসেছিল, ইংলিশ মুভি (নামটা মনে নেই যদিও)
সত্যিই ভীষণ ভয় করছিল, রাত হয়েছে অনেক, চারিদিক নিস্তব্ধ, কোনো আওয়াজ নেই শুধু ওই সিনেমার মিউজিক। বিশ্বাস করুন সেদিনের মতো ভয় আমি কোনোদিন পায়নি। সেই শেষ জীবনে
আর কোনো দিন আমি কোনো ভূতের সিনেমা দেখিনি।
ওই রাতে আর বাথরুম এ ও যেতে পারিনি, শুধু ওই রাত বললে ভুল হবে তারপর অনেকদিন পর্যন্ত ভয়টা ছিল। পরেরদিন সকালে অবশ্য সবই কে দিয়ে বকাও খাইয়েছিলাম। আর কোনোদিন এমন করেনি, যদিও ওরা দেখতো আগেই আমাদের বলতো যে এটা ভুতের সিনেমা তারপর যারা থাকতো তারাই দেখতো, তাদের দলে অবশ্য আমি কোনোদিন ই ছিলাম না।
ওই দিনটার কথা আজও পড়ে, বাকি কেক এর কথা তো আছেই, ছোটো বেলায় কেক মানেই বড়ো ব্যাপার, তখন এই মঞ্জেনিস, মিও-আমরে, সুগার অ্যান্ড স্পাইস,এই সব কিছুরই নাম জানতাম না।
তখন ফ্রুট কেকেই সন্তুষ্ট হয়ে যেতাম। এখন অবশ্য সময় পাল্টেছে।এখন আবার ব্র্যান্ডেড ছাড়া বাচ্চারা খেতেই চায়না। সে বড়দিন হোক বা জন্মদিন।
আজ এতো আধুনিকতার মধ্যেও ছোটো বেলার ওই দিন গুলি মিস করি, হয়তো অনেক সাছন্দ ছিলো না তবু আনন্দ ছিলো ভরপুর।যে আনন্দ আজকের ব্র্যান্ডেড জিনিসে খুঁজে পাইনা। বহুবছর পড়ে পুরনো দিন গুলো শেয়ার করে ভালো লাগছে, একদিকে যেমন চোঁখের কোণে জল চিকচিক করেছে অন্যদিকে তেমনি ঠোঁটের কোণে একটা হালকা হাসিও ফুটে উঠেছে,এটাই বোধহয় জীবন।
ভালো থাকবেন আপনারা। আপনাদের আগামীদিন খুব ভালো কাটুক।
আজকের কেক-
আজ মামাবাড়ী এসেছি। বোনের সাথে সময় কাটানো-
মোবাইলের কামাল-