♣️ চন্দ্রনাথের চূড়ায় উঠে এক বুক বিশুদ্ধ বাতাস এবং নিজেকে এ্যাডভেঞ্চারের দুনিয়ায় নেয়ার জন্য চলে গেলাম চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে অবস্থিত চন্দ্রনাথ পাহাড়ে। সাথে গুলিয়াখালী সী বিচ টাও দেখে আসলাম।
♣️ ** ঢাকা থেকে একটা ট্রাভেল গ্রুপের সাথে রওনা দেই আমরা। রিজার্ভ বাসে করে রাত ১২ টার দিকে আমরা যাত্রা শুরু করি। খুব ভোর বেলা আমরা চট্টগ্রাম পৌছে যাই। সকালের নাস্তা করতে আমরা সীতাকুন্ডের আল আমিন রেস্তোরাঁ তে ঢুকি। বলা বাহুল্য, তাদের খাবারের মান বেশ ভালো লেগেছে, সাথে পরিবেশটাও। আমরা হাত মুখ ধুয়ে নাস্তা করে ওখান থেকেই লেগুনা দিয়ে চলে আসি আমাদের গন্তব্যে। আসার পথে পাহাড়ি পরিবেশ আমাদের বেশ মুগ্ধ করেছে! আশে পাশে অনেক মন্দির চোখে পড়লো। পাহাড়ে উঠার আগে আমরা বাঁশের লাঠি গুলো কিনে নেই ৩০ টাকা করে, এগুলো এনে আবার ফেরত দিলে ২০ টা ব্যাক দেয়। তবে আমারটা আমি ঢাকা নিয়ে আসি কারণ আমাকে লাঠিটা বেশ সাপোর্ট দেয় ওখানে, তাই আর রেখে আসিনি। যাই হোক, আমরা লাঠি নিয়ে আর ব্যাগে প্রয়োজনীয় জিনিস, ওষুধ, পানি এসব নিয়ে অভিযান শুরু করি।
পাহাড়ের এই সৌন্দর্যের রুপে মুগ্ধ হয়ে মনে হয় যেন বার বার এখানে ফিরে আসি! এত সুন্দর দৃশ্য যা বলে বা লিখে বুঝানো যাবে না! আমরা ধীরে ধীরে পাহাড়ের এই পাকা করা রাস্তা দিয়ে এগোতে থাকি। যতই উঠছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি!! এত সুন্দর চারপাশে! আর উঠার সাথে সাথে বুঝতে পারছি পরিশ্রমটাও বাড়ছে। সামনে হয়তো আরো এ্যাডভেঞ্চার অপেক্ষা করছে! এটি আমার প্রথম এরকম পাহড়ে অভিযান, বিশেষ করে এরকম পাহাড় ট্রেকিং। তাই আমার জন্য চাপটা একটু বেশী। যাইহোক আমরা এগোতে থাকি। এক পর্যায়ে কাদামাখা পথ চলে আসে। খুব সাবধানে চোখ খোলা রেখে আমরা সেগুলো পার হই। একটু অসাবধানতায় কি হতে পারে তা আঁচ করতে পারলাম তখন থেকে। কারণ একপাশে একদম খাঁড়া খাদের মত বলতে গেলে। আমরা উপরে উঠার সময় কয়েক জায়গায় কিছু দোকান পেলাম, সেখান থেকে লেবুর শরবত এবং কিছু শুকনা খাবার খেয়ে একটু নিজেদের চাঙা করলাম। সাথে বিশ্রামটাও নিলাম। মাঝে মাঝে এরকম এ্যাডভেঞ্চারাস ট্রেকিং এবং পাহাড়ের রুপে এতই মুগ্ধ ছিলাম যে ছবি বা ভিডিওর কথাই ভুলে যাচ্ছিলাম। চারদিকে নিরব-নিস্তব্ধ। মাঝে মাঝে শুনতে পেলাম চেনা-অচেনা পাখির ডাক। দেখলাম একটা ঝরনাও। ঝর্ণা থেকে পাহাড়ে উঠার রাস্তা দুভাগ হয়ে গেছে। একটা পাহাড়ি রাস্তা, আরেকটা সিড়ি। তবে উঠার সময় পাহাড়ি রাস্তা ধরে উঠলে ভালো হয়, আর নামার সময় সিড়ি দিয়ে। আমরা কয়েক জায়গায় বিশ্রাম নিয়ে নিয়ে উপরে উঠতে থাকি। এবং এক পর্যায়ে আমরা প্রথম মন্দিরের চূড়ায় চলে আসি। এখান থেকে পাহাড়ের যে সৌন্দর্য চোখে দেখলাম তাতে সব কষ্ট দূর হয়ে গেল নিমিষে! আর কি শান্তির বাতাস, আহা! এখানে বেশ কিছুক্ষণ থাকলাম। এত ভালো লেগেছে যা বলার বাইরে। চারিদিকে সবুজ আর পাহাড়!
আমরা এখানের সৌন্দর্য উপভোগ করে এগোতে থাকলাম একদম উপরের চূড়ার উদ্দেশ্যে। আবারো পাহাড়ের পথ দিয়ে খুব সাবধানতার সাথে এগোলাম। কারণ এখানে একটু অসাবধানতা অনেক বড় কিছু ঘটাতে পারে। সব শেষে আমরা যখন একদম চন্দ্রনাথের চূড়ায় আসলাম এরপর যা দেখলাম তা আমার লিখার বা বলার শক্তির বাইরে!! চারিদিকে সবুজ আর পাহাড়ের সারি। অনেক দূরে ছোট বাড়ি ঘর দেখে অনুমান করা যায় আমরা কত উপরে আছি। আর এত বাতাস এখানে! যারা এখনো চন্দ্রনাথ ভ্রমণ করেননি, বলবো পারলে এখুনি চলে যান। পাহাড়ের চূড়ায় রয়েছে আরেকটি মন্দির। আমরা আশেপাশের সব সৌন্দর্য উপভোগ করে এরপর নামার পথ ধরি। নামার সময় আমাদের আরো সাবধানে নামতে হলো। আমাদের ভাগ্য বেশ সহায় ছিল যে ঐদিন কোন ভারী বৃষ্টি হয়নি।
♣️ যাইহোক আমরা পাহাড় থেকে নেমে বাইরে থেকে সি এন জি নিয়ে চলে আসি আল আমিন রেস্তোরাঁয়। যে যার মত ফ্রেশ হয়ে আমরা দুপুরের লাঞ্চ করি। লাঞ্চের পর আমরা কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবার সি এন জি নিয়ে চলে আসি গুলিয়াখালী সি বীচ। গুলিয়াখালী এসে দেখি একদম কাদা পার হয়ে যেতে হচ্ছে সবাইকে। আর কোন রাস্তা না থাকায় আমরাও কাদার মধ্য দিয়ে শেষমেশ সাগর পাড়ে চলে আসলাম।
এটা একটা দারুণ অভিজ্ঞতাই ছিল বলা চলে! যাইহোক, আমরা গুলিয়াখালী তে বেশ কিছু সময় কাটালাম। তবে শরীর সায় না দেয়ায় আমি আর সাগরের পানিতে নামিনি। পাড়ে থেকেই উপভোগ করে আসলাম গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত। গুলিয়াখালী ঘুরে আমরা সন্ধ্যার আগে আগে ব্যাক করি আবার রেস্তোরাঁয়। এরপর সন্ধ্যার পর আমরা নাস্তা করে নেই। এবং কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে আমরা বাসে উঠে বসি। এবং ঢাকার উদ্দেশ্যে ফিরতি পথ ধরি।
♣️ এই ছিল আমার চন্দ্রনাথ অভিযান এবং গুলিয়াখালী অভিযান <3 প্রথমবার এভাবে এত উঁচু পাহাড় ট্রেক করার অভিজ্ঞতাটা মনে রাখার মত!
♣️ যেভাবে গেলামঃ আমরা ঢাকা থেকে রিজার্ভ বাসে করে সরাসরি সীতাকুন্ড পৌর সদরে আল আমিন রেস্তোরাঁ পর্যন্ত আসি। এরপর এখান থেকে লেগুনা দিয়ে চলে আসি চন্দ্রনাথের এখানে। গুলিয়াখালী যাওয়ার সময় আমরা আল আমিন রেস্তোরাঁ থেকে এক্টূ সামনে গিয়ে সি এন জি স্ট্যান্ড থেকে সি এন জি নিয়ে চলে আসি গুলিয়াখালী।
বিঃ দ্রঃ যেখানেই যান সেখানকার পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব আমাদের। পাহাড়ে বা সমুদ্র সৈকতে ঘুরে নিজের ব্যবহৃত জিনিস বা খাবারের প্যাকেট ফেলে আসা থেকে বিরত থাকুন।