আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের আমার সকল বন্ধুরা। আশা করি বরাবরের মত আপনার অনেক ভালো আছেন। আজকে একটা সুন্দর পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলেছি। অবশ্যই আপনারা পুরো পোস্টে পড়বেন তাহলেই মূল বিষয়টি আপনারা বুঝতে পারবেন। অবশ্য আপনার আমার শিরোনামটি দেখে বুঝতে পেরেছেন আমি কোন বিষয়ের উপর কথা বলতে চলেছি। হাই বন্ধুরা, প্রবাস ও প্রবাসীদের নিয়ে সুন্দর আজকের এই পোস্টটি আমি সাজিয়েছি একটা বিশেষ মানুষের জন্য।
অনেকদিন হয়ে গেল এই প্রবাসে রয়েছি, কত মানুষ দেখছি। আর কত কিছু হয়ে যাচ্ছে চোখের সামনে সেটাও দেখছি। কত মানুষ আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছে, আবার কত মানুষ নতুন করে আসছে। এই প্রবাসে তাদের সাথে আবার আগের মতো পথচলা শুরু হয়ে যাচ্ছে। কিছু মানুষের সময় ফুরিয়ে এসেছে, কিছু মানুষের বয়স হয়ে গিয়েছে, তাই তারা ফিরে যাচ্ছে নিজ দেশে, নিজ জন্মভূমিতে।
তেমনি একজনকে আজকে এয়ারপোর্টে ছাড়তে গিয়েছিলাম। তাই আসলে ভাবলাম এই বিষয়ের উপর একটা পোস্ট আপনাদের সাথে শেয়ার করি। ছবিতে যে ব্যক্তিকে দেখছেন এই ব্যক্তি আমার সাথেই কাজ করে আমরা একসাথে কাজ করছি খুব সম্ভবত মনে হয় নয় বছরের মত হল। নয় বছরের মত পথ চলা এই ব্যক্তিটির সাথে কত কিছুই দেখেছি কত কিছুই জেনেছি এই ব্যক্তি সম্পর্কে।
এই ব্যক্তিটি এই মালয়েশিয়াতে এসেছে আমারও অনেক আগে। তবে একবারের জন্যও দেশের মাটিতে ফিরে যাওয়া হয়নি। কারণ তো অবশ্যই জানেন আমাদের এই প্রবাস জীবনে আমরা চাইলেও এই প্রবাস ছেড়ে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারি না। কারন কি জানেন বিভিন্ন সমস্যা আর বিভিন্ন আবদার পূরণ করতে করতে নিজেদের স্বপ্নটাই মাটি হয়ে যায়। ঠিক তেমনটাই হয়েছে এই ব্যক্তিটির সাথে।
এই ব্যক্তির মুখ থেকে শুনেছি, এই ব্যক্তিটি যখন এ মালয়েশিয়াতে এসেছে তার তিনটা মেয়ে অনেক ছোট ছিল। আর তার ভেতর থেকে এখন বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছে, মেজ মেয়ে প্রায় বিয়ের বয়স হয়েছে, আর ছোট মেয়েও কলেজে পড়ছে। তাহলে অনুমান করে বের করতে পারবেন কতগুলো বছর হয়ে গেছে ভাবেন।
তার মনে কি একবারও চাইনি তার সন্তানদের দেখে আসুক, দেখে আসুক তার পরিবারের সকল মানুষকে। অবশ্যই চেয়েছিল, কিন্তু চাইলে কি হবে আমরা চাইতে পারি? কিন্তু পূরণ করাটা বড় কঠিন। দীর্ঘ 14 বছর পর এই ব্যক্তিটি তার নিজ দেশে নিজ গায়ে ফিরছে। আমরা তো অনেক খুশি কারণ এতদিন পরে সে তার পুরো পরিবারটাকে স্বচক্ষে দেখবে স্বচক্ষে দেখবে তার বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-স্বজনদেরকে। তাই আজকে তাকে এয়ারপোর্টে এগিয়ে দেওয়ার জন্য এসেছি রাত তিনটার সময় তার বাংলাদেশের ফ্লাইট।
তাই বাসা থেকে বলছিল তুমি আমার সাথে চলো আমাকে একটু এগিয়ে দিয়ে আসো এয়ারপোর্টে। তাই আসলাম এই ব্যক্তিটিকে এগিয়ে দেয়ার জন্য। বাড়ি তো যাচ্ছে অনেক খুশি, তারপরও পরিবারের শখ কিন্তু ঠিকভাবে মেটাতে পারিনি। কিছু একটা কমতি রয়েছে, সেটা তার মুখ দেখলেই বোঝা যায়। যখন আমি তার কাছে জিজ্ঞেস করলাম ভাই আসলে কি হয়েছে। বলছে দেখো চৌদ্দ বছর পরে বাড়ি যাচ্ছি এই 14 বছর ধরে আমি আমার পরিবারের সকল আবদার পূরণ করেছি সকল ইচ্ছা পূরণ করেছি, সকল স্বপ্ন পূরণ করেছি, তারপরও এই বাড়ি যাওয়ার সময় মনে হলো কিছু নিয়ে যাব, তাই বেশ ভালো টাকার বাজার করেছি। কিন্তু হঠাৎ করেই আমার মেজ মেয়ে আমার কাছে এমন একটা জিনিস আবদার করে বসেছে, যে জিনিসটি আমি যদি এখন কিনতে যাই, তাহলে আমার বাড়ি যাওয়া হবে না। আবার আমার বাড়িওয়ালা এমন একটা আবদার করেছে যেটা ও ঠিক একই পর্যায়ে। কি আর বলব তাদেরকে বোঝাতে পারছি না, কত কষ্ট করে আমি আমার টিকিটের টাকা জোগাড় করেছি। কত কষ্ট করে এই ছোটখাটো জিনিসপত্র গুলো কিনেছি।
তাই একটু মন খারাপ তাছাড়া কিছু না। তখন আমি ওই ভাইটিকে সান্ত্বনা দিয়ে বললাম ভাই আসলে আপনার আমার সবার পরিবারের আবদার কখনোই শেষ হবে না তাই এটা নিয়ে অযথা চিন্তা করে লাভ নেই অনেক আশা সুখে বাড়ি যাচ্ছেন যান গিয়ে দেখেন কি হয় বাকিটা উপরওয়ালার হাতে ছেড়ে দেন তিনি যেভাবে চালাবেন সেভাবেই চলবে।
এই বলে তাকে এয়ারপোর্টে ফিরে আসলাম তাই ভাবলাম আপনাদের সাথে ছোট্ট এই কাহিনীটি শেয়ার করি যে আসলে আমরা প্রবাসীরা কথাটা নিষ্ঠুর, আমাদের নিজের স্বপ্ন নিজের সাধনা সবকিছু বিসর্জন দিয়ে সব সময় শুধু আমরা পরিবারকেই দেখি তারপরও পরিবারের কাছ থেকে আমরা সেই সম্মানটুকু পায় না সেই সহানুভূতি টুকু পায় না।
যাই হোক সবাই দোয়া করবেন, এই ভাইটির জন্য তিনি আজ ১৪ বছর পরে বাড়ি যাচ্ছে। তিনি যেন সুস্থভাবে বাড়ি গিয়ে চলাফেরা করতে পারে, ভালো থাকতে পারে পরিবার নিয়ে, সুখে থাকতে পারে, এই দোয়া ও কামনা করছি, আমি এবং আমার সাথে থাকা সকল মানুষজন করছি।
বন্ধুরা আপনাদের সামনে ছোট্ট এই পোস্টটি শেয়ার করলাম, আশা করি আপনাদের ভাল লেগেছে, সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন ধন্যবাদ।