প্রাইভেট কারের ড্রাইভারের মুখে রিক্সার ড্রাইভার এর চড়।

in blurt-132097 •  13 days ago 

এ এক চরম প্রতিবাদ উপজেলা চেয়ারম্যানের প্রাইভেট কারের ড্রাইভারের মুখে রিক্সার ড্রাইভার এর চড়।

slap-on-the-face-2022783_1280.webp
Source

তখন মাত্র আমার বিদেশ যাওয়ার কথা চলছিল।নিজেদের স্থানীয় বাজারের নামার বাজার একটি জায়গায় আড্ডা দিতাম। সেখানে আমার এক বন্ধুর দোকান ছিল। সেখানে যেতাম আড্ডা দিতাম আর চা কফি খেতাম। আর ঘটনাটা ঘটেছিল সেই দোকানের সামনেই।সেদিন বাড়ি থেকে সবেমাত্র খাওয়া-দাওয়া শেষ করে একটু আরাম করে বিকেল বেলায় গেলাম বন্ধুর দোকানে।

সেখানে নাস্তা করলাম,নাস্তা করার পরে রোডের পাশে এসে দাঁড়িয়ে রইলাম।তখন দেখতে পেলাম যে একটা প্রাইভেট কার একদিক থেকে আসতেছে।আর একটি অটো রিক্সা অপর দিক থেকে আসতে ছিল।জায়গাটা কিছুটা সরু ছিল যার কারণে দুটো গাড়ি যেতে কিছুটা সমস্যা বোধ হচ্ছিল। তখন প্রাইভেটকার এর ড্রাইভার সে তার গাড়ি সাইড না করে ওই রিক্সার ড্রাইভারকে বলে সাইট করে নিতে।

পরে রিক্সার ড্রাইভার সাইট করে নিতে তার চাকার লোহার সাথে ওই প্রাইভেটকারের বড়িতে দাগ পড়ে যায়। সাথে সাথেই রিক্সার ড্রাইভার এটা দেখে একদম থ! হয়ে গেল। এক্ষেত্রে যেটা লক্ষ্য করলাম যখন রিক্সার ড্রাইভার সাইট করে নিচ্ছিল,তখন আবার সেই কারের ড্রাইভারও গাড়ি চালাতে শুরু করলো।পরবর্তীতে ড্রাইভার যখন বুঝতে পারে যে তার গাড়ির সাথে লেগে গিয়েছে বা কোথাও সমস্যা হয়েছে। তখন সে দ্রুত গাড়ি থামিয়ে গাড়ি থেকে বের হয়ে গেল।

আর সাথে সাথে রিক্সার ড্রাইভারকে দাঁড়াতে বলে আর সাথে সাথে তার কলার চেপে ধরল। এরপর গলা চেপে ধরার সাথে সাথেই দু-একটা থাপ্পড় লাগিয়ে দিল আর সাথে গালাগালি শুরু করলো।তখন এই রিক্সার ড্রাইভার দুই হাত জড়ো করে ক্ষমা চাইতে লাগলো এবং অনেক বেশি নাজুক হয়ে গেল। কিন্তু প্রাইভেট কারের ড্রাইভার তাকে ছাড়ছে না সে গালাগালি করছে আর একটা একটা করে থাপ্পড় দিচ্ছিল।

তখন হঠাৎ আমি রিক্সার ড্রাইভারের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি তার মুখ থেকে রক্ত বেরোচ্ছিল। এটা দেখে আমার মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল। তখন সাথে সাথে আমি সেখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম এবং প্রাইভেটকারের ড্রাইভারকে ধাক্কা দিয়ে বললাম একে ছেড়ে দে। তখন আমি বলতে লাগলাম যে তুই সাইট করে না নিয়ে ওকে কেন সাইট করতে বললি। আর ও যখন সাইট করতেছিল তখন তুই আবার টান দিলি কেন।

যখন আমি সেখানে দাঁড়িয়ে তাদের সাথে কথা বলছিলাম, তখন পুরো নামার বাজারের লোকজন জড়ো হয়ে গেল। পুরো রাস্তার চারিদিকে রোড ব্লক হয়ে গেলে। তখন আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে ড্রাইভার যেহেতু মানুষ তার ভুল হতে পারে। তাই সে ক্ষমা চাইল এবং অনেক বেশি নাজুক হয়ে গিয়েছিল। তারপরেও সে ওকে মারতে ছিল এবং রক্ত পর্যন্ত বের করে ফেলছে। তাই আমি তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত নিলাম যে এই রিক্সার ড্রাইভার ওই প্রাইভেট কারের ড্রাইভারকে চড় মারবে।

।।।।।।

সেজন্য আমি ওই রিক্সার ড্রাইভারকে বললাম যে তুই এখন ওকে চড় মারবি। কিন্তু রিক্সার ড্রাইভার কোনভাবেই সে রাজি নয় কার ড্রাইভারকে চড় মারতে।সে বলে ভাই আপনার মারেন আমি মারতে পারবো না। তখন আমি রেগে গিয়ে বললাম তুই এতক্ষন মার খাচ্ছিলি এখন তুই মারবি না কেন।তোকে মারতে হবে না হলে তোরে এখানে যত লোক আছে সবাই মিলে মারবে।

তারপরও সে মারতে রাজি ছিল না। এরপর আমি যখন আবারো তাকে বললাম তুই মারতে হবে নাইলে তোর অবস্থা খারাপ করে ফেলবো। তখন সে প্রাইভেটকারের ড্রাইভারকে একদম আলতো করে,মানে খুব আস্তে একটি চড় দিল। তখন আমি বললাম না এভাবে হবে না,তোকে যেভাবে মেরেছে তোর মুখে যেরকম রক্ত বেরিয়েছিল এরকম জোরে মারবি।

পরবর্তীতে সেই রিক্সার ড্রাইভার জোরে একটা চড় দিল প্রাইভেট কারের ড্রাইভারকে। প্রাইভেট কারের ড্রাইভার তো রাগে খোপে ফুলতে ছিলো।আমার উপরে অনেক বেশি রাগান্বিত হয়েছিল সে তবে কিছুই বলতে পারছিলোনা।তখন তাকে বললাম এতে আমার কিছু করার নেই, কারণ অন্যায় করেছিস তাই আমি এই প্রতিবাদ টা করলাম। পরে সে ড্রাইভারটি প্রাইভেট কারে উঠে সেখান থেকে একটু সামনে চলে গেল।

আর এরই মাঝে নামার বাজার এরিয়ার লোকজন বলতেছিল যে ভালোই করেছেন। প্রাইভেটকার চালাচ্ছে তার অহংকারের সীমা নেই। যাই হোক আমি একটু দূরে তাকাতেই দেখি সে দাঁড়িয়ে গেল প্রাইভেটকার নিয়ে আবার কাকে যেন ফোন দিচ্ছিল। যাক আমি ভাবছি হয়তো কাউকে ফোন দিচ্ছে। কিন্তু সে যে উপজেলা চেয়ারম্যানকে ফোন দিচ্ছে সেটা আমি জানতাম না।

আর পরে জানতে পারি যে এটি উপজেলা চেয়ারম্যানের পার্সোনাল গাড়ি এবং এই হচ্ছে তার একদম বিশ্বস্ত ড্রাইভার।আর সে যাচ্ছিলো মুলত চেয়ারম্যানের ওয়াইফ কে শ্বশুরবাড়ি থেকে আনতে। তার মানে মোটামুটি প্রতিবাদ করতে গিয়ে ভালো একটা প্যারায় পড়ে গিয়েছিলাম। যদিও আমি তখন এ বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারিনি। কারণ আমি এই ঘটনা শেষে সেখান থেকে বাইক নিয়ে আবার চলে গেলাম আরেকটা জায়গায় আমার কিছু কাজ ছিল সেখানে ।

পরবর্তীতে ৩০মিনিট পর আমার ফুফা আমাকে কল দিলো। ফুফা কল দিয়ে বলল যে নিভলু তুমি কোথায়। আমি বললাম আমি তো বাজারে আছি তখন আমার ফুফা বললেন যে নামার বাজার থেকে এখন চলে যাও সেখানে সমস্যা হবে। তখন আমি কিছুটা টের পেলাম যে সেখানে কিছু না কিছু ঘটছে । আর নামার বাজারের কেউ হয়তো ফুফার কানে এই কথাটা দিয়েছে।

কারণ নামার বাজারে আমাকে অনেকেই ভালো করে চিনতো।২০০৯ এ সেখানে আমার একটি কম্পিউটার দোকান ছিল।আর সে সুবাদে আমাকে অনেকে চেনে। আবার আমার ফুফাও সে উপজেলা চেয়ারম্যানেরই লোক। সেই হিসেবে নামার বাজারে কেউ একজন আমার ফুপাকে ইনফর্ম করলো যে আমি এই ঘটনায় জড়িত ছিলাম। সেজন্যই মূলত ফুপা আমাকে সেখান থেকে সরে যেতে বলল।

।।।।।।।।।

পরবর্তীতে দুই দিন পর্যন্ত নামার বাজার এরিয়াতে আর গেলাম না।পরে তৃতীয় দিন যখন গেলাম তখন অনেক দোকানদার আমাকে বলতেছিল যে গত পরশু আপনি যখন এসেছিলেন এ ঘটনার পরে পুলিশ এসেছিল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম কেন পুলিশ আসলো তখন পরিচিত এক লোক বলে আপনি যে ড্রাইভারকে চড় মারিয়েছেন রিক্সার ড্রাইভার দ্বারা, সেই ড্রাইভারটি ছিল উপজেলা চেয়ারম্যানের পার্সোনাল ড্রাইভার।

আর সেদিন সে উপজেলা চেয়ারম্যানের বউকে আনতে যাচ্ছিল।আপনি যাওয়ার পরপরই সে উপজেলা চেয়ারম্যানকে ফোন দেয় এবং উপজেলা চেয়ারম্যান সেখানে কয়েকটি নেতা ও পুলিশ পাঠিয়েছিল।নেতারা নাকি আমার নাম বা ঠিকানা খুজেছিল কিন্তু আমাকে নামার বাজার এর লকেরা অনেকেই আবার খুব পছন্দ করতো যার কারণে কেউ আমার নাম এবং ঠিকানা দেয় নি।

তারা বলেছে কোথা থেকে এসেছিল বাইকে করে এরপর এই ঘটনার পরে সে আবার চলে গেছে এখান থেকে।বিশেষ করে আমার খুব নিয়ারেস্ট কিছু দোকানদার ছিল তারা আমাকে বলল যে নেতা আমাকে যখন জিজ্ঞাসা করলো তখন আমি বললাম না আমরা চিনি না। এটা শুনে খুব ভালো লাগলো যে আমাকে সেফ করার জন্য তারা এই কথাগুলো বললো।

তবে আমার তো এখানে দোষ নাই বললেই চলে, কারণ সেখানে তার অপরাধ ছিল তাই আমি প্রতিবাদটা করেছিলাম।যাক পরবর্তীতে নাকি পুলিশ এবং নেতারা এসে ঘোরাফেরা করে সেখান থেকে চলে গেল কোন তথ্য পেল না। এরপর একদিন উপজেলা পরিষদে আমার ফুফা গিয়েছিল। তখন উপজেলা চেয়ারম্যান বলতেছিল যে এখনকার পোলাপাইন কত খারাপ।

যেভাবে সেভাবে ঝামেলায় জড়ায় তখন ফুফা জিজ্ঞাসা করতেই উপজেলা চেয়ারম্যান বলে এইতো কয়েকদিন আগে আমার ড্রাইভারকে কে যেনো থাপ্পড় মেরেছে। তখন ফুফা বললো ও আচ্ছা বুঝছি সেটা নামার বাজার এরিয়াতে না। বলে যে হ্যাঁ আপনি কিভাবে জানেন, তখন আমার ফুফা বলে যে হ্যাঁ ওটা আমারই ভাতিজা ছিল।একথা বলাতে উপজেলা চেয়ারম্যান বলতেছিল আসলে ঘটনা কি ঘটেছিল।

তখন ফুফা বেশি কথা না বলে একটি কথায় তাকে বুঝিয়ে দিল। ফুফা বলল যে আপনি উপজেলা চেয়ারম্যান, ড্রাইভার তো আর উপজেলা চেয়ারম্যান না।তার তো অবশ্যই ভুল থাকতে পারে, আর সেজন্য ঘটনা ঘটেছে। তখন উপজেলা চেয়ারম্যান এক কথায় বুঝে নিল যে ড্রাইভার এর কোন সমস্যা ছিল যার কারণে এই সমস্যাটা হয়েছে।

তাই তিনি বাড়াবাড়ি না করে জিনিসটা ওখানেই শেষ করে দিলেন।যদিও আমি কার ড্রাইভার কে বা কারা এটা না যাচাই করেই এই ঘটনাটা ঘটালাম বা ঘটনায় জড়িত হলাম। সর্বোপরি ফুফা না থাকলে হয়তো বা ঘটনার পরিস্থিতি অন্য দিকে মোড় নিত এবং হয়তো আমার জন্য কিছুটা খারাপ হতো।সর্বোপরি ফুপাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ঘটনাটা এভাবে এই শেষ করার জন্য।

যাইহোক এই ছিল আজকের ঘটনা,আশা করছি আপনাদের ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিচ্ছি আল্লাহ হাফেজ

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE BLURT!