The Way of Native Village in EID.

in blog •  4 years ago 

নাড়ীর টানে বাড়ি, না রক্তের সম্পর্কের মানুষগুলোর সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগির জন্য, চরম কষ্টের এই যাত্রা। পূর্ব পরিকল্পিত ছুটির তারিখ; বাস, ট্রেন বা লঞ্চের অগ্রিম টিকেট কাটার ও নেই কোন সুযোগ, পড়ন্ত বিকালের ঠিক কিছুটা সময় আগে, কতৃপক্ষের কাছ থেকে ছুটি পেয়ে, লক্ষ লক্ষ গার্মেন্টস শ্রমিকেরা তাদের পরিবার নিয়ে মহাসড়কে ফুটপাতে দাড়িয়ে পড়ে, কারণ বাড়ি তাদের যেতেই হবে,যে কোন কিছুর বিনিময়েই হোক না কেন, গ্রামের বাড়িতে তাদের বাবা-মা, ভাই-বোন, পড়াপ্রতিবেশিরা অধির আগ্রহে তাদের পথচেয়ে বসে আছে। তারা বাড়ি যেতে না পারলে যে, তাদের পরিবারের ঈদ বলে কিছুই থাকবে না। তাইতো তারা ঈদে বাড়ি ফেরার মহাযুদ্ধের যোদ্ধা বনে যেতে কোন প্রকার সংকোচবোধ করেন না। মনের ভিতরে তাদের অসীম আত্মবিশ্বাস মহাসড়কে গেলে কোন না কোন যানবাহন তারা পেয়েই যাবে,বাড়ি যাবার জন্য। কষ্ট একটু হবে, কিন্তু সেই কষ্টটা পরিবারের সকলকে নিয়ে ঈদ করার আনন্দের কাছে অতি নগন্য।

IMG_20200731_012110.jpg

গল্পের সূচনাটা আমাদের কাছে অপরিচিত কোন দৃশ্য নয়, বরংচ আমাদের কাছে খুবই সুপরিচিত একটি নাটিকা, যেটা প্রতিবছর রমজান এবং কোরবানির ঈদে সম্প্রচারিত হয় সমগ্র বিশ্ববাসির কাছে, নাটিকার শিরোনামে কোন পরিবর্তন আসে না। "ঈদে ঘর মূখো মানুষের চরম ভোগান্তি"। অভিনয়ে লক্ষ লক্ষ পোশাক শ্রমিক, ছোট খাট বেসরকারি চাকুরীজীবি, ঢাকা শহরের পরিচিত রিক্সা এবং সিএনজি চালক এবং তাদের পরিবারের সদস্যবৃন্দ। পরিচালনায় বাংলাদেশের সড়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রনালয়। দুঃখ পাবার কোন কারন নাই, অাপনি আমি সকলেই এই নাটকের সক্রিয় চরিত্র।

IMG_20200731_005527.jpg

IMG_20200731_010236.jpg

চরম বাস্তবতাকে নাটিকারূপে উপস্থাপনের জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। নাটিকার সাথে তুলনা না করেও উপায় কোথায়, আমাদের সমাজ পরিলানাকারি ব্যক্তিদের কাছে এই ঘটনাচক্রটি নিছকই নাটিকা ছাড়া আর কিছু বলে মনে হয় না, যদি মনে হতো তাহলে যুগের পর যুগ একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতো না। বছরের পর বছর ঈদে ঘর মুখো মানুষের ভোগান্তি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতো না। কয়েক যুগের যাত্রার ভোগান্তি থেকে কি আমরা বিন্দু পরিমান অভিজ্ঞতা অর্জন করতে সক্ষম হই নাই?

IMG_20200731_011741.jpg

IMG_20200731_011403.jpg

আমার মতো আমাজনতাও এই বিরাট সমস্যার একাধিক সমাধান দিতে পারবে অনায়াসে, সেখানে আমরা যাদেরকে সমাধানের গদিদে স্থাপন করেছি তারা কেন এই সমস্যার সমাধান করতে ব্যর্থ। মানলাম আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব উন্নত মানের না। আমাদের মহাসড়কগুলো প্রসস্থ না। যানযট নিত্য দিনের ঘটনা আমাদের জন্য। কিন্তু এখানের যানযটের প্রশ্ন সর্বপ্রথমে আসছে না, সর্বপ্রথমে আসছে, ঈদের ছুটি ঘোষনা হরার সাথে সাথেই কেন লক্ষ লক্ষ পরিবার অনিশ্চিত একটা যাত্রার জন্য নিজ বাসা এবং কর্মস্থল ত্যাগ করে।

IMG_20200731_011120.jpg

IMG_20200731_011202.jpg

আমি রেল যোগাযোগের কথা উহ্যই রাখলাম এখানে, যেহেতু আমাদের দেশে ঈদের ছুটি সমগ্রদেশে একই দিনে এবং একই সময়ে একযোগে ঘোষনা করা হয়, দলে দলে ঘর মূখো মানুষের স্রোত পড়ে যায় মহাসড়কগুলোতে। তাদের মধ্যে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের অগ্রীম টিকেট কাটা থাকে, আর বাকি সবাই মহাসড়কের পাশে দাড়িয়ে থাকে কখন তাদের গন্তব্যস্থলগামী একটা বাস আসবে। তার উপর আবার সিট না পাবার আশঙ্কা এবং দ্বিগুনের চেয়ে বেশি ভাড়া গুনার আশঙ্কা নিয়ে তীর্থের কাকের মতো স্বপরিবারে রাস্তার পাশে দাড়িয়ে থাকতে হয়। যখনি নির্ধারিত একটা বাসের দেখা মেলে হুমড়ি খেয়ে পড়ে সবাই বাসের উপর, বাসের কন্ট্রাকটর ইচ্ছে মতো দেয় দাম হাকিয়ে, যাদের সামর্থ হয় তারা উঠে পড়ে বাসে, আর যাদের সামর্থ হয় না, তারা আবার তীর্থের কাক বনে যায়।

IMG_20200731_010633.jpg

IMG_20200731_010405.jpg

সবচেয়ে মজার বিষয় কি জানেন, সেদিন আমাদের দেশে পন্যবাহী কোন যানবাহন থাকে না, সকল প্রকার যানবাহনেই মানুষ যাত্রি পরিবহনের লাইসেন্স পেয়ে যায়। বাস, ট্রাক,পিকআপ ভ্যান এমনকি কার্গো ভ্যান গুলো সেদিন মানব সেবায় নেমে পড়ে। ঘর মূখো মানুষ হয়ে যায় তাদের কাছে পন্য। জার্নি বাই বাস, ট্রাক৷ পিকআপ ভ্যান, কার্গো ভ্যান যাই হোক না কেন, যারা সেদিন বাড়ি যাবার উদ্দেশ্যে রাস্তায় বেড় হয়, তাদেরকে সেদিনেই বাড়ী যেতেই হবে।

IMG_20200731_012049.jpg

IMG_20200731_012030.jpg

ভাই পিছনে অনেক গাড়ী আসতেছে, এভাবে ব্যাগ এবং বউ নিয়ে হেটে কোথায় যান, হেটে হেটে বাড়ী চলে যাবেন নাকি? উত্তরে জৈনিক ব্যক্তিটি বলল, যে জ্যাম পড়েছে ভাই, গাড়ী যে কখন অ্যাইবো আল্লাহ জানে, তাই সামনে আগাই দেখি যদি কোন ট্রাক, পিকআপ পাই। আমি জানি এটা তার মনের ভিতরের কোন ইচ্ছে না, ট্রাকে পরিবার নিয়ে যাবার তার কোন প্রকার ইচ্ছে নাই। ওই ব্যক্তিটি তাৎক্ষণিকভাবে কোন প্রকার সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না। তাই সে কার পরিবারকে নিয়ে এলোপাথাড়িভাবে হাটা শুরু করে দেয় ফুটপাত দিয়ে, কারন তাদের মাথায় শুধু একটাই চিন্তা বাড়ী তাদের যেতেই হবে।

IMG_20200731_012245.jpg

IMG_20200731_011949.jpg

দুইশত তিনশত কিলোমিটার যাত্রাপথের চরম ভোগান্তিতো আছেই, তার চেয়ে চরম কষ্ট সেই পথগুলো পাড়ি দেবার জন্য যানবাহন খুজে পাওয়া। আমরা চাইলেই এর সঠিক সমাধান খুজে বেড় করতে পারি। আমরা ঈদের ছুটি ঢাকার এলাকা ভিত্তিক করতে পারি। সকল পোশাক কারখানাগুলোকে আমরা নির্দেশ দিতে পারি,আপনাদের শ্রমিকদের জন্য এলাকাভিত্তিক রিজার্ভ পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য। অতিরিক্ত ভাড়া সংগ্রহের উপরে অাইন প্রনয়ন এবং তার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা। অনলাইনের মাধ্যমে অগ্রীম টিকিট সংগ্রহ নিশ্চতকরন। যাত্রী পরিবহনকারী যানবাহন ব্যতিত অন্যকোন প্রকার যানবাহনে যাত্রী পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা জারিকরন।

IMG_20200731_011905.jpg

IMG_20200731_010309.jpg

নিজের গ্রামে, নিজ পরিবারের সাথে ঈত করা আমাদের সকলের নৈতিক অধিকার। বাড়ি আমাকে যেতেই হবে এই মানসিকতা থেকে আমরা হয়তো কখনো বেড় হয়ে আসতে পারব না, তবে সুপরিকল্পিত ঈদ যাত্রা আমরা চাইলেই করতে পারি।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE BLURT!